জীবন কে সৌন্দর্যমণ্ডিত করতে ইসলামের ভূমিকা অনন্য।

প্রকাশিত: ১:৫৭ অপরাহ্ণ, মার্চ ১৭, ২০২৩

জীবন কে সৌন্দর্যমণ্ডিত করতে ইসলামের ভূমিকা অনন্য।
booked.net

Manual8 Ad Code

শান্তির ধর্ম ইসলাম। জীবন কে সৌন্দর্যমণ্ডিত করতে ইসলামের ভূমিকা অনন্য। মানুষের জন্য নির্ভুল দর্শন ও জীবনাদর্শ। আল্লাহ পৃথিবীর বুকে এ জীবনাদর্শ প্রেরণ করেছেন এটিকে প্রবর্তিত ও বিজয়ী করতে এবং বিজয়ী রাখতে। আর এ কাজ করার জন্য মহান আল্লাহ মুসলিম জনগোষ্ঠীর ওপর সংগঠিত ও একতা অনিবার্য করে দিয়েছেন।

এ ছাড়া কোনো জাতির অস্তিত্ব ও স্বকীয়তা রক্ষার জন্য একতার বিকল্প নেই। কোনো সংগঠিত ও ঐক্যবদ্ধ জাতিকে সহজেই কেউ নিশ্চিহ্ন ও পরাজিত করতে পারে না। একতা, সংঘবদ্ধতা, ত্যাগ ও সংগ্রাম-সাধনার মাধ্যমেই হতে পারে কোনো জাতি বিজয়ী, অর্জন করতে পারে সম্মান, সাফল্য ও উন্নতি। যে কোনো শত্রুই এমন জাতিকে সমীহ করে চলতে বাধ্য। এমন জাতিকে পর্যুদস্ত করা চাট্টিখানি কথা নয়। এমনকি তাদের অগ্রগতির পথকে রুদ্ধ করারও কেউ নেই।

Manual2 Ad Code

সংগঠিত ও সংঘবদ্ধ থাকার ব্যাপারে ইসলাম অত্যন্ত গুরুত্বারোপ করেছে মানবজাতিকে। মুসলমানদের মাঝে যেন কোনো ধরনের বিশৃঙ্খলা ও বিচ্ছিন্নতা দেখা না দেয়, সে ব্যাপারেও অসংখ্য নির্দেশনা রয়েছে। মুসলমানরা কীভাবে সংঘবদ্ধ হয়ে থাকবে সে বিষয়ে পবিত্র কুরআনুল কারিমে আল্লাহ ইরশাদ করেন, আর তোমরা একযোগে আল্লাহর রজ্জু সুদৃঢ় রূপে ধারণ করও এবং বিভক্ত হয়ে যেয়ো না এবং তোমাদের প্রতি আল্লাহর যে দান রয়েছে তা স্মরণ কর।

যখন তোমরা পরস্পর শত্রু ছিলে তখন তিনিই তোমাদের অন্তঃকরণে প্রীতি স্থাপন করেছিলেন, অতঃপর তোমরা তাঁর অনুগ্রহে ভ্রাতৃত্বে আবদ্ধ হলে এবং তোমরা অনল-কুণ্ডের ধারে ছিলে, অনন্তর তিনিই তোমাদের তা থেকে উদ্ধার করেছেন; এরূপে আল্লাহ তোমাদের জন্য স্বীয় নির্দেশনাবলি ব্যক্ত করেন, যেন তোমরা সুপথপ্রাপ্ত হও। (সূরা আলে ইমরান : ১০৩)।

আয়াতে আল্লাহকে ভয় করার কথা বলার পর তোমরা একযোগে আল্লাহর রজ্জু সুদৃঢ় রূপে ধারণ করো। এ আদেশ দিয়ে এ কথা পরিষ্কার করে দিলেন যে, মুক্তিও রয়েছে এ দুই মূল নীতির মধ্যে এবং ঐক্য প্রতিষ্ঠিত হতে ও থাকতে পারে এ মূল নীতিরই ভিত্তিতে। অতঃপর ‘পরস্পর বিচ্ছিন্ন হয়ো না’-এর মাধ্যমে দলে দলে বিভক্ত হওয়া থেকে নিষেধ করা হয়েছে। অর্থাৎ, উল্লিখিত দুটি মূল নীতি থেকে যদি তোমরা বিচ্যুত হয়ে পড়, তাহলে তোমরা পরস্পর বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়বে এবং ভিন্ন ভিন্ন দলে বিভক্ত হয়ে যাবে।

Manual7 Ad Code

আল্লাহ কুরআনুল কারিমের অন্য এক আয়াতে ইরশাদ করেন, তিনি তোমাদের জন্য নির্ধারিত করেছেন সে দ্বীন বা ধর্মকে; যার নির্দেশ দিয়েছিলেন নূহ (আ.)কে এবং যা আমি প্রত্যাদেশ করেছি আপনাকে এবং যার নির্দেশ দিয়েছিলাম ইবরাহিম, মূসা ও ঈসা (আ.)কে এই বলে যে, তোমরা ধর্মকে প্রতিষ্ঠিত করো এবং তাতে মতভেদ সৃষ্টি করো না। আপনি মুশরিকদের যে বিষয়ের প্রতি আহ্বান জানান, তা তাদের কাছে দুঃসাধ্য বলে মনে হয়। আল্লাহ যাকে ইচ্ছা দ্বীন ধর্মের প্রতি আকৃষ্ট করেন এবং যে তাঁর অভিমুখী হয়, তাকে ধর্মের দিকে পরিচালিত করেন। (সূরা শুরা : ১৩)।

উক্ত আয়াতে আল্লাহ দ্বীন প্রতিষ্ঠার নির্দেশ দেওয়ার পর সর্বশেষ যে কথা বলেছেন, তা হচ্ছে তোমরা দ্বীন বা ধর্মের মধ্যে মতভেদ সৃষ্টি করো না। কিংবা তাতে পরস্পর বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ে না। পূর্ববর্তী উম্মতদের কর্মকাণ্ড থেকে শিক্ষা গ্রহণ করে এ ধরনের কাজ থেকে সাবধান করে বহু হাদিস বর্ণিত হয়েছে। আবদুল্লাহ ইবনু মাসউদ (রা.) বলেন, একদিন রাসূল (সা.) আমাদের সামনে একটি সরল রেখা টানলেন। অতঃপর এর ডানে ও বায়ে আরও কয়েকটি রেখা টেনে বললেন, ডান-বামের এসব রেখা শয়তানের আবিষ্কৃত পথ।

এর প্রত্যেকটিতে একটি করে শয়তান নিয়োজিত রয়েছে। সে মানুষকে ওই পথগুলোতে চলার উপদেশ দেয়। অতঃপর তিনি মধ্যবর্তী সরলরেখার দিকে ইশারা করে বললেন, ‘আর এটা আমার সরলপথ, সুতরাং তোমরা এরই অনুসরণ কর।’ [মুসনাদে আহমাদ : ১/ ৪৩৫]। এ দৃষ্টান্তে সরলপথ বলে নবি-রাসূলদের অভিন্ন দ্বীনের পথই বোঝানো হয়েছে। এতে শাখা-প্রশাখা বের করা ও বিভেদ সৃষ্টি করা হারাম ও শয়তানের কাজ। এ সম্পর্কে হাদিসে কঠোর নিষেধাজ্ঞা বর্ণিত হয়েছে। রাসূল (সা.) ইরশাদ করেন, ‘যে ব্যক্তি মুসলিমদের জামাত অর্থাৎ সামষ্টিকভাবে সব উম্মত থেকে অর্ধ হাত পরিমাণও দূরে সরে পড়ে, সে নিজেই নিজের কাঁধ থেকে ইসলামের বন্ধন সরিয়ে দিল।’ [আবু দাউদ : ৪৭৬০]।

রাসূল (সা.) আরও বলেন, ‘শয়তান মানুষের জন্য ব্যাঘ্রস্বরূপ। বাঘ ছাগলের পেছনে লাগে। অতঃপর যে ছাগল পালের পেছনে অথবা এদিক-ওদিক বিচ্ছিন্ন হয়ে থাকে সেটির ওপরই পতিত হয়। তাই তোমাদের উচিত দলের সঙ্গে থাকা-পৃথক না থাকা। [মুসনাদে আহমাদ : ৫/২৩২]।

মনে রাখতে হবে, মুসলমানরা সবাই এক উম্মত; তাদের থেকে কেউ আলাদা কোনো দল করে পৃথক হলে সে উম্মতের মধ্যে বিচ্ছিন্নতা ঘটাল। এটাই শরিয়তে নিন্দনীয়। এ প্রসঙ্গে আরও একটি হাদিস বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য যে, হজরত হারিস আল আশআরি (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ (সা.) ইরশাদ করেন, আমি তোমাদের পাঁচটি বিষয়ের নির্দেশ দিচ্ছি, স্বয়ং রব আমাকে ওইগুলোর নির্দেশ দিয়েছেন।

বিষয়গুলো হচ্ছে-সংঘবদ্ধ, আমিরের নির্দেশ শ্রবণ, নির্দেশ পালন, হিজরত এবং আল্লাহর পথে জিহাদ। যে ব্যক্তি একতা ত্যাগ করে এক বিঘত পরিমাণ দূরে সরে গেছে সে নিজের গর্দান থেকে ইসলামের রজ্জু খুলে ফেলেছে। সাহাবারা জিজ্ঞেস করলেন, হে আল্লাহর রাসূল (সা.) সালাত কায়েম এবং সাওম পালন করা সত্ত্বেও এর উত্তরে রাসূল (সা.) বলেন, নামাজ কায়েম, রোজা পালন এবং মুসলমান বলে দাবি করা সত্ত্বেও। সুনানে তিরমিজি।

Manual2 Ad Code

রাসূলুল্লাহ (সা.) ইরশাদ করেন, পারস্পরিক ভালোবাসা, দয়া, অনুগ্রহ, মায়া-মমতার দৃষ্টিকোণ থেকে তুমি মুমিনদের দেখবে একটি দেহের মতো। যদি দেহের কোনো একটি অংশ আহত হয়ে পড়ে তবে অন্যান্য অংশও তা অনুভব করে। (বুখারি ও মুসলিম)।

উপরোক্ত আয়াত এবং হাদিসগুলো থেকে কিছু বিষয় পরিষ্কার হলো যে-মুসলিমদের অবশ্যই সংঘবদ্ধ থাকতে হবে। কখনো ঐক্য থেকে বের হয়ে মুক্ত জীবন কাটানো যাবে না। ঐক্য বা সংঘবদ্ধ থেকে বের হওয়া মানেই ইসলামের মূলনীতি থেকে বের হয়ে যাওয়া। মুসলমানদের ঐক্য ও সংঘবদ্ধতা আল্লাহর বিশেষ এক নিয়ামত। আমির বা নেতার আনুগত্য করতে হবে। ঐক্যবদ্ধ ছাড়া সঠিক পথে প্রতিষ্ঠিত থাকা সম্ভব নয়। দলাদলি, বিশৃঙ্খলা ও বিচ্ছিন্নতা মুসলমানদের জন্য অকল্যাণকর। ঐক্যের ভিত্তি হবে কুরআন ও হাদিস।

শেষ কথা হলো, একতাবিহীন কোনো কিছুই করা সম্ভব নয়। ঐক্য অবশ্যই জরুরি। বিচ্ছিন্নতা যেমন একটা জাতিকে ধ্বংস করে দিতে পারে, তেমন ঐক্যও পৌঁছে দিতে পারে কাংক্ষিত লক্ষ্যে। অতএব, আমাদের জন্য উত্তম হলো, সংঘবদ্ধভাবে জীবন গঠন করা।

Manual3 Ad Code

Ad

Follow for More!