প্রকাশিত: ২:২০ অপরাহ্ণ, সেপ্টেম্বর ১৬, ২০২৪
স্টাফ রিপোর্ট:- কুলাউড়ায় সম্পত্তি ভাগ-বাটোয়ারা না করে ছোট ভাই মাজিদুর রহমান আফজলের বিরুদ্ধে প্রায় ৬০ কোটি টাকার যৌথ সম্পদ ও অর্থ আত্মসাতের অভিযোগ করছেন মোস্তাফিজুর রহমান উজ্জ্বল নামে একজন ব্যবসায়ী। তিনি দাবী করে বলেন, তার আপন ছোট ভাই আফজল তাদের পিতা মারা যাবার পর মৃত্যুর তথ্য গোপন রেখে পিতার স্বাক্ষরিত চেকে কয়েক কোটি টাকা উত্তোলন করে আত্মসাৎ করেছে। তাছাড়া পৈত্রিক বাস ভবন সহ অন্যান্য জমি ব্যাংকে বন্ধক রেখে মোটা অঙ্কের টাকা ঋণ তুলে ওই টাকা পরিশোধ না করে বিষয়টি ঝুলিয়ে রেখে নির্ভেজাল জায়গায় একটি বিশাল ভবনের নির্মাণ কাজ শুরু করেছেন।
এছাড়া’ও পিতার নামীয় বিভিন্ন দাগের জমি ব্যাংকে বন্ধকী থাকাবস্থায় তিনি ওই জমি তাকে মৌখিক ভাবে দিয়ে প্রায় ৬০ কোটি টাকার সম্পত্তি তাঁর নিয়ন্ত্রণে রেখেছেন। এ বিষয়ে গত ১৫ বছর ধরে বড় ভাই মোস্তাফিজুর রহমান উজ্জ্বল প্রতিকার চেয়ে প্রশাসন, স্থানীয় পঞ্চায়েতের কাছে বিচারপ্রার্থী হলেও মৌলভীবাজার জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মিসবাহুর রহমান সহ আওয়ামী লীগের প্রভাব খাটিয়ে ছোটভাই আফজল বিষয়টির কোন সুরাহা করতে দেননি বলে সংবাদ সম্মেলন করে অভিযোগ করেন বড় ভাই উজ্জ্বল।
সোমবার ১৬ সেপ্টেম্বর দুপুরে পৌর এলাকার লস্করপুর বাজারে সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্যে মোস্তাফিজুর রহমান উজ্জ্বল বলেন, কুলাউড়া পৌরসভার লস্করপুর গ্রামের বাসিন্দা হাজী আব্দুল জব্বারের তিন ছেলে মোস্তাফিজুর রহমান উজ্জ্বল, মাজিদুর রহমান আফজল ও মাহফুজুর রহমান সায়েম। তাদের পিতা জীবিত থাকাবস্থায় তাঁদের ব্যবসা প্রতিষ্ঠান শাপলা ব্রিকস ও তিতাস ব্রিকস নামে দুটি ব্রিকস ফিল্ড, কুলাউড়া শহরে আব্দুল জব্বার মার্কেট, কুলাউড়া ভাঙ্গারী পট্টি সড়কে জায়গা, নিজ ঠিকানার বাসা, বাসার পাশে জায়গা এবং কৃষি জমি সহ প্রায় ৬০ কোটি টাকার সম্পদ রেখে গত ২০১০ সালের ৮ মার্চ সকাল ১০টা ২০ মিনিটে সিলেট রাগিব রাবেয়া মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান। মৃত্যুর আগপর্যন্ত তাদের পিতার সাথে সমস্ত ব্যবসায় জড়িত ছিলেন আফজল। ১৯৯৯ সাল থেকে ঠিকাদারী ব্যবসার সাথে জড়িত থেকে যে টাকা উপার্জন করেন তা উজ্জ্বল নিজের ব্যাংক একাউন্টে (সাউথইস্ট ব্যাংক) জমা রাখেন এবং পরবর্তীতে ওই ব্যাংকে তার পিতার নামীয় সিসি একাউন্ট তিতাস ব্রিকসে টাকা স্থানান্তর করেন।
পরবর্তীতে আফজল ওই একাউন্ট তার নামে স্থানান্তর করে নেয়। পিতার সাথে ব্যবসায় জড়িত থাকার সুযোগে পিতাকে কয়লার ব্যবসা সহ বিভিন্ন ধরণের ব্যবসার কথা বলে ৪-৫ কোটি টাকা আত্মসাৎ করে সে। একপর্যায়ে ওই টাকার কোন হিসাব দিতে না পারায় তাদের পিতা টেনশন করে অসুস্থ হয়ে মৃত্যুবরন করেন। অপর দিকে আফজল ব্যবসার নাম করে পুঁজির প্রয়োজন বলে তার দুই ভাইকে বুঝিয়ে সুঝিয়ে বাসভবন, বাসার পাশের কিছু জায়গা সহ অন্যান্য কিছু জমি সাউথইস্ট ব্যাংক কুলাউড়া শাখায় বন্ধক রেখে ১ কোটি ৫০ লক্ষ টাকা ঋণ নিয়ে আত্মসাৎ করেন। বর্তমানে ওই বাসা সহ বাসার কিছু জমি সহ অন্যান্য কিছু জায়গা ব্যাংকের নিকট দায়বদ্ধ রয়েছে। পিতার মৃত্যুর পর থেকে ২০১৩ সাল পর্যন্ত যৌথ ভাবে বসবাস করেন তিনভাই। ওই সময়ে আফজল তাদের পিতার রেখে যাওয়া দুটি ব্রিকস ফিল্ড সহ অন্যান্য ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের আয়ের আরো ৮-১০ কোটি টাকা আত্মসাৎ করেন। এভাবে আফজল তার পিতার ব্যবসার আরো প্রায় ১৮-২০ কোটি টাকা আত্মসাৎ করেন।
তাদের পিতা সিলেট রাগিব রাবেয়া মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মৃত্যুবরণ করার সময় বড়ভাই উজ্জ্বল পিতার সাথে হাসপাতালে থাকাবস্থায় মৃত্যুর সংবাদ ছোটভাই আফজল কে দিলে তিনি চতুরতার আশ্রয় নিয়ে কাউকে পিতার মৃত্যুর সংবাদ না জানিয়ে আফজলের কাছে থাকা পিতার স্বাক্ষরিত করা খালি চেক দ্বারা ব্যাংক থেকে সম্পূর্ণ টাকা উত্তোলন করে পরবর্তীতে সবাইকে পিতার মৃত্যুর সংবাদ জানায়। এমতাবস্থায় হঠাৎ করে আফজল ২০১৩ সালে ভাইদেরকে পৃথক করে দেয়। এরমধ্যে কোন ধরণের পুঁজি ছাড়া আমাকে কিছু ইট, মাটি ও ইটের গুড়ো দিয়ে মেসার্স শাপলা ব্রিকস এবং সে নিজে মেসার্স তিতাস ব্রিকস ও ছোটভাই সায়েম কে কুলাউড়া শহরের মার্কেটের দায়িত্ব দেন। পরে আফজল ও ছোটভাই সায়েমকে নিয়ে পিতার নামীয় জায়গা সম্পত্তি কৃষি জমি ভোগ দখলে নেয়।
সংবাদ সম্মেলনে উজ্জ্বল আরো জানান, আফজল কোন প্রকার পুঁজি ছাড়া শাপলা ব্রিকস এর দায়িত্ব দিলে আমাকে ব্রিকস ফিল্ডের ঝিকঝাক (ক্লিন) নির্মাণ সহ ব্রিকস ফিল্ডের খলা মেরামত করতে গিয়ে ৩ কোটি টাকা খরচ করতে হয়। এতে করে মানসিক টেনশনে আমি হ্যার্টএট্যাক করে হার্টে তিনটি রিং লাগাই। বর্তমানে আমাকে অলাভজনক একটি ব্রিকস ফিল্ড ও শহরের উত্তর বাজারে মাত্র ৪ শতক জমি বুঝিয়ে দিয়ে বাকি প্রায় ৬০ কোটি টাকার সম্পত্তি আমার দুই ছোটভাই তাদের দখল এবং নিয়ন্ত্রণে রেখেছে। বিগত ১৫ বছর ধরে পৈত্রিক সম্পত্তি ভাগ বাটোয়ারা করার জন্য আমি অনেক মানুষের দ্বারে ঘুরে কোন ন্যায় বিচার পাইনি। বিভিন্ন মহলে ধর্ণা দিলেও মৌলভীবাজার জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মিসবাউর রহমান, আফজলের শশুর কমলগঞ্জের সোলায়মান চেয়ারম্যান ও স্থানীয় আওয়ামী লীগের প্রভাবশালী নেতাদের দাপটে সম্পত্তি ভাগ- বাটোয়ারায় রাজি হয়নি। তাদের দাপটে আমার সাথে চরম অন্যায় করা হয়েছে।
আমার একটাই দাবি,পারিবারিক সকল সম্পত্তি ভাগ-বাটোয়ারা করে এবং ব্যাংকে বন্ধককৃত সম্পত্তি ফিরিয়ে এনে সুষমবন্টন করতে হবে। এরপর পারিবারিক সম্পত্তিতে নতুন ভবন নির্মাণ করলে আমার কোন আপত্তি থাকবে না।
উজ্জ্বল বলেন, শুধু তাই নয় ; আফজল পিতার নামীয় কুলাউড়া ভাঙ্গারী পট্টির জায়গা হতে সাড়ে সতের শতক জায়গা বিক্রি করে ও পিতার নামীয় ব্যাংকের ২টি এফডিয়ারের টাকা সহ আরো ১ কোটি ২৭ লক্ষ টাকা আত্মসাৎ করে। পৈত্রিক সম্পত্তি আত্মসাৎ করে ব্যাংকের ঋণ পরিশোধ না করে এবং তাদের বাসার জায়গা ভাগ বাটোয়ারা না করে সে নতুন পাকা ভবনের নির্মাণ কাজ শুরু করে। শুক্রবার ১৩ সেপ্টেম্বর সকালে আফজলকে নির্মাণ কাজে বাধা দিলে সে আমার কথা কর্ণপাত না করে জোরপূর্বক ভবনে কাজ চালিয়ে যায়। এ বিষয়টি লিখিতভাবে কুলাউড়া থানায় অভিযোগ দিলে সোমবার দুপুরে একদল পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে নির্মাণ কাজ বন্ধ করে দেয়।
এদিকে মাজিদুর রহমান আফজল তাঁর বিরুদ্ধে আনীত অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, আমার পিতা মারা যাওয়ার পূর্বেই সমস্ত ব্যবসা-বাণিজ্য আমাকে দিয়ে পরিচালনা করিয়েছেন। তিনি মারা যাওয়ার পর মৌখিকভাবে আমরা তিন ভাইকে ব্রিকস ফিল্ড সহ ব্যবসা প্রতিষ্ঠান বন্টন করে দেওয়া হয়। আমার পিতার নির্মিত পাকাভবনে আমরা তিনভাই ও মা বসবাস করছি। কিন্তু বাসাটি ছোট হওয়ায় মা, তিন ভাইয়ের সন্তানাদি নিয়ে বসবাস করতে হিমশিম খাচ্ছি। মায়ের নির্দেশে এবং ভাই-বোনদের সাথে আলোচনা ক্রমে বাসার আরেকটি জায়গায় নতুন ভবনের নির্মাণ কাজ শুরু করি। আমার বড়ভাই যদি এ বিষয়ে মনক্ষুন্ন হয়ে থাকেন তাহলে নির্মিত ভবনের খরচ আমাকে দিয়ে উক্ত ভবনটি নিয়ে নিলে আমার কোন আপত্তি থাকবেনা। তবে আমাদের ভাই -বোনদের মধ্যে রেজিষ্ট্রিকৃত ভাগ- বাটোয়ারার দলিল সম্পাদন হয়নি। স্থানীয়পর্যায়ে লিখিত ভাবে ভাগ-বন্টনমূলে আমি ও ছোটভাই সায়েমের অনুকূলে যে সম্পত্তি ও ব্যবসা-বাণিজ্য পড়েছে সেগুলোই কেবল আমরা ভোগদখল করছি। সাউথইস্ট ব্যাংকে দেড় কোটি টাকা ঋণ পরিশোধ করেছি তবে ব্যাংক থেকে জায়গাটি অবমুক্ত করিনি এটি আমার একটি ভূল হয়েছে।
এ ব্যাপারে জানতে চাইলে কুলাউড়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি)বিনয় ভূষণ রায় বলেন,অভিযোগ পাওয়ার পর পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে নির্মাণাধীন কাজ বন্ধ করে দেয় এবং কোন ধরণের সংঘাতে না গিয়ে আলোচনার মাধ্যমে ভাই ভাইয়ের বিরোধ নিষ্পত্তির জন্য নির্দেশনা দেওয়া হয়।
ছবি:- সাংবাদিক সম্মেলনে কথা বলছেন মোস্তাফিজুর রহমান উজ্জ্বল।
Published From
Positive International Inc,
73-16, Roosevelt Ave Floor 2, Jackson Heights, New York 11372.
Email : voiceofkulaura2@gmail.com
Chief Editor : Shafiq Chowdhury
Editor : Abdul Quayyum
Managing Editor : Nurul Islam Emon
Design and developed by positiveit.us