কারও প্রতি অহেতুক মন্দ ধারণা পাপের কাজ।

প্রকাশিত: ৬:৩৩ পূর্বাহ্ণ, আগস্ট ২৩, ২০২৪

কারও প্রতি অহেতুক মন্দ ধারণা পাপের কাজ।
booked.net

ধর্ম ডেস্ক:- চিন্তা-গবেষণামূলক মনোভাব প্রত্যেক বিবেকবান মানুষেরই থাকা দরকার। উন্নত চিন্তা ও কল্যাণকর ভাবনা মানুষকে বিবেকবান উন্নত মানুষে পরিণত করতে পারে। তখন তার কর্ম পুণ্যতে পরিণত হয়ে থাকে। পক্ষান্তরে ভালোমন্দ বিবেচনা বহির্ভূত খাম- খেয়ালীপনা কল্যাণ বয়ে আনতে পারে না। এই শ্রেণীর মানুষ মন্দ ধারণা নিয়ে সমাজ কে হিংসা-বিদ্বেষ ও শত্রুতা নির্ভর করে গড়ে তোলে। মন্দ ধারণার মধ্যদিয়ে মুসলিম ভ্রাতৃত্ববোধ নষ্ট হয়ে যায়। নানান অন্যায় ও অপকর্মে জড়িয়ে পড়তে হয়। তখন এর সঙ্গে সম্পৃক্তরা গোনাহগার হয়ে থাকে। এজন্য সুচিন্তা-ভাবনা নিয়ে চলতে হবে, কখনও কুচিন্তা কিংবা মন্দ ধারণা করা যাবে না।

 

এ প্রসঙ্গে আল্লাহতায়ালা বলেন,‘হে ঈমানদারগণ! তোমরা অধিক ধারণা থেকে দূরে থাক; কারণ অনুমান কোনো কোনো ক্ষেত্রে পাপ এবং তোমরা একে অন্যের গোপনীয় বিষয় অনুসন্ধান করো না। একে অপরের গিবত করো না। তোমাদের মধ্যে কি কেউ তার মৃত ভ্রাতার গোশত ভক্ষণ করতে চাইবে?’ -সূরা হুজরাত: ১২

 

অধিক ধারণা ও মন্দ ধারণা করা থেকে অন্যায়ের জন্ম হয়। মানুষ অনেক ক্ষেত্রে ভালো ধারণার পরিবর্তে মন্দটাকে প্রাধান্য দিতে ভালোবাসে। অন্যের সম্মান রক্ষার পরিবর্তে নিজের লাভটা তালাস করে। পবিত্র কোরআনে স্পষ্টভাবে মুসলমানের সম্মান ও ইজ্জত রক্ষার আদেশ সহ অন্যের প্রতি অনুমান ও মন্দ ধারণা পোষণ করা নিষিদ্ধ করা হয়েছে। পরস্পরের প্রতি সুন্দর ধারণার সৃষ্টি করা এবং সংশয়-সন্দেহ থেকে দূরে থাকতে বলা হয়েছে।

 

আমরা মাঠে-ময়দানে, মঞ্চে-টেবিলে হরহামেশাই ধারণা প্রসূত কথা বলে থাকি। মিথ্যা ও অনুমানভিত্তিক বাগাড়াম্বর করে আমিত্ব রক্ষা ও শ্রেষ্ঠত্ব অর্জনের চেষ্টা করে থাকি। অথচ পবিত্র কোরআনে এমন মন্দ ধারণার বশবর্তী হয়ে অন্যের বিরুদ্ধে মুখে কিছু উচ্চারণ তো দূরে থাক মনে মন্দ ধারণা করা থেকে বিরত থাকতে বলা হয়েছে।

 

এ প্রসঙ্গে হজরত রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, ‘তোমরা ধারণা থেকে বেঁচে থাকো। কারণ, ধারণাভিত্তিক কথা সবচেয়ে বড় মিথ্যা। তোমরা একে অপরের দোষ অনুসন্ধান করো না আর পরস্পর হিংসা ও বিদ্বেষ পোষণ করো না এবং পরস্পর শত্রুতা ও দুশমনি পোষণ করো না; বরং ভাই ভাই হয়ে থাকো। ’ -বোখারি শরিফ

 

হজরত আবু হুরায়রা (রা.) বলেন, হজরত রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘তোমাদের কেউ যখন তার মুসলিম ভাইয়ের কাছে যায় তখন যেন সে তার খাবার থেকে খায় ও পানীয় থেকে পান করে এবং অনুসন্ধান না করে। ’ –বায়হাকি ও মিশকাত

 

আমাদের সামাজিক জীবনে পারস্পরিক আন্তরিকতা বজায় রাখতে হবে। অযথা সন্দেহ পোষণ থেকে বিরত থাকতে হবে। ইসলামে এর থেকে শুধু নিরুৎসাহিত করা হয়নি বরং কঠোরভাবে নিষেধ করা হয়েছে। ধারণা নির্ভর করে এবং গুজবের ওপর ভর করে অনেক অঘটন ঘটানোর নজির আছে। শোনা কথার সত্যতা যাচাই না করে অন্যায়ভাবে অপরের বিরুদ্ধে বিষোদগার করা বা শায়েস্তা করার নামে নির্যাতন ও অপদস্ত করার ঘটনাও ঘটে আসছে। আর এভাবেই চলছে ব্যক্তিস্বার্থ হাসিলের অপ-তৎপরতা। চলছে দলবাজি ও সমাজকে বিভক্ত করণের কর্মকাণ্ড।

 

মুসলমান হিসেবে আমাদের কর্তব্য হওয়া উচিত, পারস্পরিক সম্পর্ক সুদৃঢ় রাখা এবং ইসলামি ভ্রাতৃত্ব বোধকে অটল রাখার জন্য মন্দ ধারণা থেকে নিজেকে পরহেজ করার পাশাপাশি সত্যতা যাচাই ব্যতীত কারও বিরুদ্ধে অভিযোগ বিশ্বাস না করা।

 

তাছাড়া সবার সঙ্গে হাসিমুখে, স্বচ্ছ ও পরিচ্ছন্ন হৃদয়ে কথা বলা এবং দেখা-সাক্ষাৎ করা আমাদের নৈতিক দায়িত্ব। মানুষের প্রতি সুধারণা পোষণ করা এবং অন্যের কাজকর্ম দেখার সময় ভালো ও নিরপেক্ষ দৃষ্টিতে দেখা দরকার। কাজ দেখার পূর্বেই যদি মন্দ ধারণা পোষণ করা হয় তখন ভালো কিছু মন থেকে দূরে সরে যেতে চায়। বাহ্যিকভাবে যার মধ্যে সততা ও সত্যবাদিতা পরিলক্ষিত হয় তার সম্পর্কে অন্যায় ধারণা পোষণ করা সঠিক নয়।

 

তবে কারও মধ্যে যদি সুস্পষ্ট ভাবে অন্যায় ও অসত্য পরিলক্ষিত হয়, তার স্বভাব-প্রকৃতিও ভালো না হয় এবং সে বিষয়ে সমাজে তার কুখ্যাতিও থাকে, সে ক্ষেত্রে মন্দ ধারণা পোষণ করা অন্যায় হবে না।

 

তাই আসুন, আল্লাহর হুঁশিয়ারি বাণীকে সম্বল করে অজানা বিষয়কে ধারণার বশবর্তী হয়ে সত্য ভেবে মানুষ সম্পর্কে কুধারণা থেকে নিজেকে রক্ষা করি। সন্দেহপ্রবণ মানসিকতা থেকে নিজেদের কে মুক্ত করে উন্নত চরিত্রের অধিকারী হতে চেষ্টা করি। আল্লাহ আমাদের তওফিক দান করুন। আমিন।

Ad