ইসলামের দৃষ্টিতে আত্মহত্যা মহাপাপ।

প্রকাশিত: ৫:১০ পূর্বাহ্ণ, জুলাই ১১, ২০২৫

ইসলামের দৃষ্টিতে আত্মহত্যা মহাপাপ।
booked.net

ধর্ম ডেস্ক:- আত্মহত্যা মানে নিজকে নিজে ধ্বংস করা। নিজ আত্মাকে চরম কষ্ট ও যন্ত্রণা দেওয়া। নিজ হাতে নিজের জীবনের যাবতীয় কর্মকাণ্ডের পরিসমাপ্তি ঘটানো। ইসলামি দৃষ্টিকোণে আত্মহত্যা একটি জঘন্যতম মহাপাপ।

 

আল্লাহ মানুষকে মরণশীল করে সৃষ্টি করেছেন। মানুষকে একমাত্র আল্লাহ তাআলাই জন্ম দেন এবং একমাত্র তিনিই মৃত্যু ঘটান। কিন্তু আত্মহত্যার ক্ষেত্রে বান্দা স্বাভাবিক মৃত্যুকে উপেক্ষা করে মৃত্যুকে নিজের হাতে নিয়ে নিজেই নিজেকে হত্যা করে ফেলে। এ কারণে এটি একটি গর্হিত কাজ, কবিরাহ গোনাহ। যার একমাত্র শাস্তি জাহান্নাম। মহান আল্লাহ এমন কাজকে মোটেই পছন্দ করেন না। যদিও শরিয়তের নির্দেশনায় অনাড়ম্বর ভাবে আত্মহত্যাকারীর জানাজা পড়ার বিধান রয়েছে, তবু রাসুলুল্লাহ (স.) নিজে কখনো আত্মহত্যাকারীর জানাজা পড়াননি। সাহাবিদের দ্বারা তা পড়িয়েছেন। নবিজি (স.) আত্মহত্যাকারীর জানাজা আদায় না করা থেকেই অনুমান করা যায় যে, আত্মহত্যা কত বড় পাপ।

 

আত্মহত্যা ইহকাল-পরকাল উভয়টিই ধ্বংস করে দেয়। মানুষ তার জীবনের মালিক নয়; এর প্রকৃত মালিক হচ্ছেন আল্লাহ তাআলা। অতএব, আল্লাহর মালিকানাধীন জীবনের ওপর বান্দার হস্তক্ষেপ করার কোনোই অধিকার নেই। সুরা বাকারার ১৯৫ নম্বর আয়াতে আল্লাহ হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করে বলেন, ‘তোমরা স্বহস্তে নিজকে নিজে ধ্বংসের মুখে ঠেলে দিও না।’

 

সুরা নিসার ২৯ ও ৩০ নম্বর আয়াতে আল্লাহ আরো বলেন, ‘আর তোমরা নিজেদের হত্যা কোরো না। নিশ্চয়ই আল্লাহ তোমাদের ওপর দয়ালু। যে ব্যক্তি বাড়াবাড়ি ও জুলু্মের মাধ্যমে এ কাজ করবে, তাকে আমি আগুনে পোড়াব। এ কাজ আল্লাহর পক্ষে সহজ।’

 

হাদিস শরিফে আত্মহত্যার পরিণতি উল্লেখ করে বলা হয়েছে, নবি করিম (স.) বলেছেন, তোমাদের পূর্ববর্তী লোকদের মধ্যে এক ব্যক্তি ছিল, সে আহত হয়ে ছটফট করতে লাগল। এমতাবস্থায় সে ছুরি নিয়ে নিজেই নিজের হাত কাটল এবং ব্যাপক রক্তপাত ঘটাল। এতে তার মৃত্যু হলো। আল্লাহ এই ব্যক্তি সম্পর্কে বলেছেন, ‘আমার এই বান্দা নিজের ব্যাপারে খুব তাড়াহুড়া করে ফেলেছে। এ কারণে আমি তার প্রতি জান্নাত হারাম করে দিয়েছি।’ (বুখারি)

 

বুখারির অপর এক বর্ণনায় হজরত আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত, নবি করিম (স.) বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি পাহাড় থেকে লাফিয়ে পড়ে আত্মহত্যা করবে, সে জাহান্নামে অনুরূপভাবে আত্মহত্যা করতেই থাকবে এবং এটিই হবে তার স্থায়ী বাসস্থান। যে ব্যক্তি বিষপানে আত্মহত্যা করবে, তার বিষ তার হাতে থাকবে, জাহান্নামে সে সর্বক্ষণ বিষপানে আত্মহত্যা করতে থাকবে। আর এটা হবে তার স্থায়ী বাসস্থান। আর যে ব্যক্তি লৌহাস্ত্র দিয়ে আত্মহত্যা করবে, সেই লৌহাস্ত্রই তার হাতে থাকবে, জাহান্নামে সে তা নিজ পেটে ঢোকাতে থাকবে আর সেখানে সে চিরস্থায়ীভাবে থাকবে।’

 

ইসলামি আক্বিদা-বিশ্বাস ও এর জীবনব্যবস্থায় হতাশার কোনো স্থান নেই। জীবনকে ধ্বংস করে হীনম্মন্যতা বোধেরও কোনো সুযোগ নেই। মুমিনের বিশ্বাস, মানব জীবনের শেষ সীমা মৃত্যু নয়। কেননা, যে জীবনের সীমা মৃত্যু তা তো অস্থায়ী। মৃত্যুর পরের জীবন হচ্ছে কবরের জীবন; এরপর হাশর-নাশর। বিচার-ফায়সালার পরেই তার আসল ঠিকানা জান্নাত। সেই জান্নাত তার চিরস্থায়ী আবাস্থল। জান্নাতের অফুরন্ত জীবনে মহাপ্রভু আল্লাহর সঙ্গে তার দিদার হবে।

 

পার্থিব জীবন সম্পর্কে আমাদের প্রিয় নবী (স.) আল্লাহর কাছে প্রার্থনা করে বলতেন, ‘হে আল্লাহ! যতক্ষণ পর্যন্ত আমার জীবন আমার জন্য কল্যাণকর, ততক্ষণ আমাকে জীবিত রাখো। আর আমাকে মৃত্যু দাও তখনই, যখন আমার জন্য মৃত্যুটা কল্যাণকর।’ রাসুলুল্লাহ (স.)-এর এই প্রার্থনা থেকে আমরা যে শিক্ষা গ্রহণ করতে পারি তা হলো, জীবনের ভালো-মন্দের মালিক আল্লাহকেই বোঝায়, নিজ থেকে জীবনের ওপর এমন কোনো সিদ্ধান্ত না নেওয়া, যা দ্বারা জীবনের মহাক্ষতি হয়। জীবন একমাত্র আল্লাহর অনুদান। প্রকৃত জীবন হলো পরকালের জীবন। এই পার্থিব জীবন শুধু পরকালের প্রস্তুতিমূলক কর্ম সম্পাদনের জন্য। তাই এই জীবনের মূল্যায়ন পরকালে প্রতিদানপ্রাপ্তির সহায়ক বলে গণ্য হবে। অতএব, পরিপূর্ণ ধৈর্য ও সহনশীলতার মাধ্যমে জীবনকে পরম সফলতার দিকে এগিয়ে নিয়ে যেতে হবে। তাই মহান প্রভুর অনুমতি ও নির্দেশনা ছাড়া এতে কোনো ধরনের হস্তক্ষেপ করা বৈধ হবে না। আল্লাহ আমাদের সহিহ্ বুঝ দান করুন। আমিন!

 

Ad