প্রকাশিত: ৬:৪৩ পূর্বাহ্ণ, নভেম্বর ৮, ২০২৫
ধর্ম ডেস্ক:- দুনিয়ায় মানুষ অধিকাংশ সময় কাটায় অন্যকে ভালোবাসার চেষ্টায় ও মানুষের ভালোবাসা পাওয়ার আশায়। কিন্তু অধিকাংশ সময় এই ভালোবাসা পাওয়া হয় না, পেলেও সেটা হয় অস্থায়ী ভালোবাসা।
যারা কেবল মানুষের সন্তুষ্টি, মানুষের ভালোবাসা ও দুনিয়ার সম্মান পাওয়ার জন্য জীবন ব্যয় করে, তারা একসময় উপলব্ধি করে এই ভালোবাসা ছিল মরীচিকার মতোই।
একজন মানুষের মৃত্যু হলে খুব কম মানুষই তাকে মনে রাখে বা তার জন্য দোয়া করে। স্মরণীয় হয়ে থাকেন সেই মানুষরাই, যারা ইলম, আমল ও তাদের কাজের মাধ্যমে কল্যাণকর ছিলেন। যারা আল্লাহর ভালোবাসা অর্জন করতে পেরেছিলেন।
তাই আমাদের জীবনের মূল লক্ষ্য হওয়া প্রয়োজন আল্লাহ তায়ালার ভালোবাসা অর্জন করা। কারণ আল্লাহর ভালোবাসা পেলে অন্যদের ভালোবাসা স্বাভাবিকভাবেই আসবে।
আল্লাহকে ভালোবাসতে এবং তাঁর ভালোবাসা পেতে হলে তাঁর দেওয়া বিধি-নিষেধ মেনে চলা জরুরি। ইমাম ইবনুল কাইয়িম (রহ.) তাঁর মাদারিজ আস-সালিকিন নামক গ্রন্থে আল্লাহর ভালোবাসা অর্জনের ১০টি উপায় বর্ণনা করেছেন:-
১. ঘৃণিত কথা, কাজ ও চিন্তা-ভাবনা ত্যাগ করা-
আল্লাহ তায়ালার ভালোবাসা অর্জনের সবচাইতে বড় মাধ্যম হল সব ধরনের ঘৃণিত কাজ, কথা ও চিন্তা-ভাবনা ত্যাগ করা। আত্মশুদ্ধি ছাড়া আল্লাহর প্রিয় বান্দা হওয়া সম্ভব নয়। আল্লাহ বলেন, “নিঃসন্দেহে সে সফলকাম হয়েছে, যে তাকে পরিশুদ্ধ করেছে।” (সুরা শামস, আয়াত: ৯)
২️. আল্লাহর জিকির করা-
আল্লাহ তায়ালার ভালোবাসা পাওয়ার একটি উপায় হচ্ছে মনোযোগী অন্তর নিয়ে অধিক পরিমাণে তাঁর জিকির করতে হবে। জিকির শুধুমাত্র মুখের উচ্চারণ নয়, হৃদয়ের গভীর থেকে আল্লাহকে স্মরণ করা।
প্রতিদিন মনোযোগ দিয়ে অর্থ বুঝে জিকির করলে অন্তর শান্ত হয়। আল্লাহই বলেছেন, “অবশ্যই আল্লাহর স্মরণেই অন্তর প্রশান্তি লাভ করে।” (সুরা রা’দ, আয়াত: ২৮)
৩. কোরআন নিয়ে চিন্তাভাবনা করা:-
কোরআনের আয়াতগুলো শুধু পড়ার জন্য নয়, এগুলো নিয়ে আমাদেরকে গভীরভাবে চিন্তা-ভাবনা করতে বলা হয়েছে। কারণ কোরআন তো চিন্তা ভাবনা করার বিষয়, বুঝে আমল করার বিষয়।
প্রতিদিন কয়েকটি আয়াতের অর্থ নিয়ে ভাবা, সেগুলোকে আমাদের জীবনের সঙ্গে মিলিয়ে আমরা চিন্তা ভাবনা করতে পারি। “তারা কি কোরআন নিয়ে চিন্তা ভাবনা করে না…?” (সুরা নিসা, আয়াত: ৮২)
৪️. আল্লাহর নেয়ামতে কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করা:-
আমরা আল্লাহ থেকে প্রাপ্ত নেয়ামতের প্রতি কৃতজ্ঞ হতে পারি। নেয়ামতদাতার প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেই আমরা কৃতজ্ঞ হতে পারি। তবে শুধু মুখে প্রকাশ নয়, নেয়ামতের সঠিক ব্যবহার এবং অন্যদের কল্যাণের কাজে সেগুলো লাগানোও কৃতজ্ঞতা।
আল্লাহ বলেন, “…যদি তোমরা শুকরিয়া আদায় কর, তবে আমি অবশ্যই তোমাদের বাড়িয়ে দেব…।” (সুরা ইবরাহিম, আয়াত: ৭)
৫️. নামাজে খুশু–খুজু বজায় রাখা:-
নামাজ হল অন্তরও শরীর দুটারই ইবাদত। নামাজে মনোযোগ ধরে রাখা এবং বিনয়সহ আল্লাহর সামনে দাঁড়ানো আমাদের জন্য ভীষণ জরুরি। এতে আমরা আল্লাহর ভালোবাসা পাব এবং আখিরাতে ও সফল হব, ইনশাআল্লাহ। আল্লাহর কথা “অবশ্যই মুমিনগণ সফল, যারা নিজেদের নামাজে বিনয়াবনত।” (সূরা মু’মিনুন: আয়াত, ১–২)
৬️. নেককারদের সাহচর্য গ্রহণ:-
যারা আল্লাহর কাছে প্রিয়, যারা পাপ বা নেতিবাচক কাজ ও পরিবেশ থেকে দূরে থাকে, সেই সব ভালো মানুষদের সঙ্গে সময় কাটানো আল্লাহর ভালোবাসা পাওয়ার আরেকটি উপায়। কারণ হাদিসে এসেছে, “মানুষ তার বন্ধুর দ্বীনের অনুসারী হয়। সুতরাং তোমাদের প্রত্যেকের দেখা উচিত যে, সে কার সাথে বন্ধুত্ব করছে।” (সুনানে আবু দাউদ,হাদিস: ৪৮৩৩)
৭. নফল ইবাদতের মাধ্যমে নৈকট্য অর্জন করা:-
নফল নামাজ আদায় করা, নফল রোজা রাখা, সদকা করা ইত্যাদি বিভিন্ন ধরনের নফল ইবাদতের মাধ্যমে আমরা আল্লাহর নৈকট্য অর্জন করতে পারি। নিয়মিত নফল ইবাদত বান্দাকে আল্লাহর নিকটবর্তী হতে সাহায্য করে।
হাদিসে কুদসিতে আছে, আল্লাহ বলেছেন, “…আর আমার বান্দা নফল ইবাদতের মাধ্যমে আমার নৈকট্য লাভ করতে থাকে, পরিশেষে আমি তাকে ভালোবাসতে শুরু করি।” (সহিহ বুখারি হাদিস:, ৬৫০২)
৮️. আল্লাহ ভালোবাসলে ভালোবাসা বৃদ্ধি পায়:-
আল্লাহ যদি কোনো মানুষকে ভালোবাসেন, তখন তাঁর অন্তরে ও আল্লাহর প্রতি ভালোবাসা বৃদ্ধি পায়। এটি প্রকাশ পায় তাঁর ইবাদত ও মানবসেবার মধ্য দিয়ে।
কোরআনে বলা হয়েছে, “…যাদেরকে তিনি ভালোবাসবেন এবং তারাও তাঁকে ভালোবাসবে।।” (সুরা মায়িদা, আয়াত: ৫৪)
৯. আল্লাহর নাম ও গুণাবলি স্মরণ করা:-
আল্লাহর নাম ও গুণাবলি মনে রাখা আল্লাহর ভালোবাসা পাওয়ার আরেকটি উপায়। আর সেগুলো নিয়ে চিন্তা ভাবনা করা এবং সে অনুযায়ী আমল করাও এর অন্তর্ভুক্ত। এতে আল্লাহর মর্যাদা উপলব্ধি করা যায়।
হাদিসে আছে, “আল্লাহর নিরানব্বইটি মানে এক কম একশ’টি নাম রয়েছে। যে ব্যক্তি এ নামগুলো মুখস্থ করবে সে জান্নাতে যাবে। (সহিহ বুখারি, হাদিস: ২৭৩৬)
১০. রাতের শেষ তৃতীয়াংশে ইবাদত করা:-
রাতের শেষ ভাগে আল্লাহর সান্নিধ্যে নির্জনে তাহাজ্জুদ আদায় করা, জিকির, ইস্তিগফার ও দোয়া করা আল্লাহর ভালোবাসা পাওয়ার একটি শক্তিশালী উপায়। তাহাজ্জুদ ও গভীর রাতের ইবাদত বান্দাকে আল্লাহর অনেক নিকটে এনে দেয়। আল্লাহ তাঁর নৈকট্যশীলদের প্রশংসা করে বলেছেন, “আর রাতের শেষ প্রহরে এরা ক্ষমা চাওয়ায় রত থাকত।” (সুরা জারিয়াত, আয়াত: ১৮)
শেষ কথা:-
দুনিয়ার সব সম্পর্ক অস্থায়ী। মানুষের ভালোবাসাও ক্ষণস্থায়ী। কিন্তু প্রকৃত শান্তি, স্থায়ী আনন্দ এবং হৃদয়ের পরিপূর্ণতা আসে শুধুমাত্র আল্লাহর সাথে সংযুক্তির মাধ্যমে। আল্লাহর নির্দেশে চললে আমাদের জীবন স্থিতিশীল হয়। এতে সত্যিকারের সুখ ও শান্তি লাভ করা যায়।
সূত্র:- মাদারিজুস সালিকিন, ৩/৯, দারুল কুতুব আল–ইলমিয়্যা, বৈরুত।


Published From
Positive International Inc,
73-16, Roosevelt Ave Floor 2, Jackson Heights, New York 11372.
Email : voiceofkulaura2@gmail.com
Chief Editor : Shafiq Chowdhury
Editor : Abdul Quayyum
Managing Editor : Nurul Islam Emon
Design and developed by positiveit.us