অপহৃত কুলাউড়ার কাস্টমস কর্মকর্তা আবদুল আহাদের মরদেহ মিলল ফেনীতে।

প্রকাশিত: ৪:৩৩ অপরাহ্ণ, অক্টোবর ৩০, ২০২৫

অপহৃত কুলাউড়ার কাস্টমস কর্মকর্তা আবদুল আহাদের মরদেহ মিলল ফেনীতে।
booked.net

Manual3 Ad Code

নিজস্ব সংবাদ দাতা:- অবশেষে ৬ বছর পর পাওয়া গেলো চট্রগ্রাম থেকে অপহৃত কুলাউড়ার কাস্টমস কর্মকর্তা আবদুল আহাদের (৪৬) মরদেহ। মরদেহে শরীরে আঘাতের কোন চিহ্ন পাওয়া যায়নি। প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হচ্ছে স্ট্রোকজনিত কারণে তার মৃত্যু হয়েছে। তবে ময়নাতদন্তের প্রতিবেদন পেলে মৃত্যুর প্রকৃত কারণ নিশ্চিত হওয়া যাবে।

 

Manual4 Ad Code

গেল বুধবার সকালে ফেনীর ছাগলনাইয়ায় অজ্ঞাত এক ব্যক্তির মরদেহ উদ্ধারের পর পকেটে পাওয়া একটি ব্যাংক চেকের সূত্র ধরে বেরিয়ে আসে হারিয়ে যাওয়া এক জীবনের করুণ পরিসমাপ্তি। শনাক্ত হয় ছয় বছর আগে চট্টগ্রাম থেকে অপহৃত কাস্টমস কর্মকর্তা আবদুল আহাদের (৪৬) মরদেহ।

 

Manual8 Ad Code

পরিবারের দাবি, অপহরণের পর তখন মুক্তিপণ হিসেবে দুই লাখ টাকা দেওয়ার পরও তাকে ফেরত পায়নি তারা। পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, ২৯ অক্টোবর বুধবার সকালে ফেনীর ছাগলনাইয়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের প্রধান ফটকের সামনে অজ্ঞাত এক ব্যক্তিকে অজ্ঞান অবস্থায় স্থানীয়রা উদ্ধার করে হাসপাতালের জরুরি বিভাগে নিয়ে যায়। কর্তব্যরত চিকিৎসক বিভিন্ন পরীক্ষা করে তাকে মৃত ঘোষণা করেন। খবর পেয়ে ছাগলনাইয়া থানা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. আবুল বাশারের নেতৃত্বে পুলিশের একটি দল তাৎক্ষণিক হাসপাতালে যায়। সেখানে মরদেহের পরিচয় শনাক্ত করতে তার সঙ্গে থাকা কাগজপত্র দেখার সময় উত্তরা ব্যাংক ফেনীর বিরিঞ্চি শাখার একটি চেক পায় পুলিশ। চেকে হিসাবের নাম আবদুল আহাদ উল্লেখ রয়েছে। পরে পুলিশ ব্যাংক কর্তৃপক্ষকে হিসাব নম্বর জানালে তারা আবদুল আহাদের পরিচয় নিশ্চিত করেন।

 

ছাগলনাইয়া থানা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. আবুল বাশার বলেন, ব্যাংক কর্তৃপক্ষের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী নিহত আবদুল আহাদ মৌলভীবাজার জেলার কুলাউড়া থানার হাজীপুর ইউনিয়নের দাউদপুর গ্রামের ইমানী মিয়ার ছেলে বলে জানা যায়। মরদেহ ময়নাতদন্তের জন্য ফেনী জেনারেল হাসপাতালের মর্গে রাখা হয়েছে। এদিকে নিহতের পরিচয় শনাক্তের পর স্থানীয়দের মধ্যে চাঞ্চল্য দেখা দেয়। ফেনীতে ব্যাংক হিসাব কী করে খুললেন তা নিয়ে তৈরি হয়েছে ধোঁয়াশা। পরে দিনভর নানা তথ্য যাচাই করলে বেরিয়ে আসে তার ফেনীতে আসার পেছনের গল্প। এ ব্যাপারে জানতে চাইলে নিহতের ছোট বোন নাঈমা নাসরিন মনি বলেন, “আমার ভাই একসময় সিলেট ব্রিটানিকা উইমেন্স কলেজে রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের প্রভাষক ছিলেন। পরবর্তীতে সিলেট বিমানবন্দরে কাস্টমসের অডিটর পদে নিয়োগপ্রাপ্ত হয়ে চাকরি করেন। এরপর একই পদে ঢাকা হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর ও পরে চট্টগ্রাম বিমানবন্দরে দায়িত্ব পালন করেন। চট্টগ্রাম বিমানবন্দরে কর্তব্যরত অবস্থায় ২০১৯ সালের ১ মে হঠাৎ তার মুঠোফোন বন্ধ পাই। পরে একটি নম্বর থেকে কল দিয়ে আমাদের জানানো হয় আবদুল আহাদকে অপহরণ করা হয়েছে। বিকাশে দুই লাখ টাকা মুক্তিপণ পাঠালে তাকে ছেড়ে দেওয়া হবে।”

Manual3 Ad Code

 

অপহরণকারীদের দাবি অনুযায়ী তখন আমরা দুই লাখ টাকা পাঠিয়েছি। এরপর তাদের নম্বরে যোগাযোগ করলেও বন্ধ পাই। অন্যদিকে আমার ভাইয়ের সঙ্গে যোগাযোগ করার চেষ্টা করেও তাকে পাইনি। পরিবারের পক্ষ থেকে স্থানীয় থানায় নিখোঁজ ডায়েরি করার ছয় বছর পরও ভাইকে আর পাইনি। বুধবার সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে জানতে পারি ফেনীর ছাগলনাইয়ায় আমার ভাইয়ের মরদেহ পাওয়া গেছে।”একই প্রসঙ্গে কথা হয় নিহতের ভাগ্নে মোস্তাফিজুর রহমান সাকিফের সঙ্গেও। তিনি বলেন, আমার মামার দুই কন্যা সন্তান রয়েছে। ছোট মেয়ে গর্ভে থাকাকালীন তিনি নিখোঁজ হন। এর মাঝে ছেলের নিখোঁজের শোকে আমার নানা-নানি দুইজনই মারা গেছেন। দীর্ঘ ছয় বছর আমরা মামাকে খোঁজাখুঁজি করে পাইনি। তিনিও আমাদের সঙ্গে যোগাযোগ করেননি। একটি স্বচ্ছল পরিবারের সন্তান আবদুল আহাদকে অপহরণের পর থেকে তিনি পরিবার কিংবা স্বজনদের কারো সঙ্গে যোগাযোগ না করার কারণ নিয়ে গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেন তিনি। একইসঙ্গে তার এমন মৃত্যুকে রহস্যজনক বলেও মন্তব্য করেন মোস্তাফিজুর রহমান সাকিফ। এ বিষয়ে জানতে নিহতের স্ত্রী মাহবুবা আক্তার সুমার সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করেও তাকে পাওয়া যায়নি। তবে আবদুল আহাদের মরদেহ বুঝে নিতে তার বড় ভাই আবদুল নুর বৃহস্পতিবার রাত ৭টায় জানান, ফেনী থেকে লাশ নিয়ে আমরা বাড়ীতে রওনা দিয়েছি।

 

Manual3 Ad Code

 

এ সংক্রান্ত আরও সংবাদ

Ad

Follow for More!