প্রকাশিত: ৪:১৮ অপরাহ্ণ, জানুয়ারি ১০, ২০২২
আব্দুল কুদ্দুসঃ- কুলাউড়ায় কাতার প্রবাসী স্বামীকে পিঠিয়ে হত্যা করে দেশে লাশ পাঠানোর অভিযোগ এনে সংবাদ সম্মেলন করেছেন স্ত্রী রোজিনা আক্তার। সোমবার (১০ জানুয়ারি) বিকেলে কুলাউড়ায় এক সংবাদ সম্মেলন করে স্বামীর আত্মীয়-স্বজনরা তাকে প্রবাসে পিঠিয়ে হত্যা করার বিষয়টি লিখিত বক্তব্যে উল্লেখ করেন তিনি। এ সময় রোজিনা বেগমের পাশে থাকা তার দুই শিশু সন্তানের চোখের পানি টলমল করে ফেলতে দেখা যায়। রোজিনা বেগম স্বামী হত্যাকারীদের শাস্তির আওতায় এনে দ্রুত বিচারের জন্য প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রী এবং প্রধানমন্ত্রীর আশুদৃষ্টি কামনা করেন।
লিখিত বক্তব্যে রোজিনা আক্তার জানান, তার স্বামী শরীফপুর ইউনিয়নের পূর্বভাগ গ্রামের নুরুল ইসলাম চৌধুরীর ছেলে কাতার প্রবাসী আমিরুল ইসলাম সিমু চৌধুরী দীর্ঘ প্রায় ৪ বছর প্রবাসে (দোহা, কাতার) থেকে রুজি-রোজগার করছিলেন। গত বছরের ৪ এপ্রিল শরীফপুর ইউনিয়নের চাঁনপুর গ্রামের বাসিন্দা আব্বাস আলীর পুত্র যথাক্রমে উজ্জল, খায়রুল, আজহারুল ইসলাম ও খছরু গংরা মিলে কাতারে বাসার ভিতর পরিকল্পিতভাবে পিঠিয়ে তাকে হত্যা করেন। কাতারস্থ দোহা বাসায় যেখানে সিমু চৌধুরী থাকতেন সেই একই বাসায় মেসে তার মামাতো ভাই উজ্জল, খায়রুল, আজহারুল ইসলাম এবং খছরুও থাকতেন। রোজিনা আক্তার বলেন, কোন কারণ ছাড়াই পূর্ব পরিকল্পিতভাবে গত বছরের ৪ এপ্রিল তারা আমার স্বামীকে সেখানে পিঠিয়ে হত্যা করেন। ওইসময় স্বামীর মোবাইল নাম্বারে ফোন দিলেও কেউ ফোন রিসিভ করেনি। ফোন রিসিভ না হওয়ায় তখন তিনি অনেকটা উদ্বিগ্ন হয়ে পড়েন। ঘটনার (৪ এপ্রিল) ৭ দিন পর স্বামী হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে মারা যাওয়ার সংবাদ ফোনে জানান উজ্জল গংরা।তিনি বলেন, স্বামী হত্যার সংবাদ গোপন রেখে ৭ দিন পরে তাদেরকে জানানোয় সিমুর পরিবার তাকে (সিমু চৌধুরীকে) পরিকল্পিতভাবে হত্যা করার বিষয়টি নিশ্চিত হন।
রোজিনা আরো বলেন, ওই সময় স্বামীর লাশ দেশে আনতে সবকিছু চাপা দিয়েও তাদের সাথে কৌশলে যোগাযোগ করার চেষ্টা করেন তিনি। মৃত্যুর ৯ দিন পর স্বামীর লাশ দেশে পাঠিয়েছে সিমু চৌধুরীর মামাতো ভাইয়েরা। ১৩ এপ্রিল লাশ দেশে আসার পর লাশের ময়নাতদন্তের জন্য আমরা অনুরোধ করলেও ময়না তদন্ত না করে দ্রুত লাশ দাফনের ব্যবস্থা করেন চানঁপুর গ্রামের মৃত আহমদ আলীর ছেলে নাসির উদ্দিন। তিনি এলাকার গণ্যমান্য ব্যক্তিবর্গের সম্মুখে মৃত্যুর ৪০ দিন পর স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান জনাব আলী ও ইউপি সদস্য মখদ্দছ আলীসহ গণ্যমান্য ব্যক্তিদের নিয়ে উচিত বিচার করে দেওয়ার একটি অঙ্গিকারনামা লিখেন। পরবর্তীতে ২৩ জুলাই স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান জনাব আলীর সভপতিত্বে এক বৈঠকে রোজিনা ও তার দুই শিশুকে তাদের ভরণ-পোষন বাবত নগদ ৫ লক্ষ টাকা দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। বৈঠকে অন্যান্যের মাঝে আব্দুল মতিন, সাদেক আলী মহরী, মামুন আহমদ, আজিরুল ইসলাম, বীর মুক্তিযোদ্ধা আয়ুব আলী, নজরুল ইসলাম, তাজুল ইসলাম, লুৎফুর রহমান, নুরুল ইসলাম চৌধুরী, ওয়াতির আলী, ক্বারী তাজ উদ্দিন, আব্দুল খালিক, বাবু আহমদ, জুবের আহমদ ও কাউছার আহমদ উপস্থিত ছিলেন। পরবর্তী সময়ে মৃত ছিদ্দেক আলীর ছেলে শায়েদ মিনহাজ সিদ্দিকী পল্লব ও মৃত আহমদ আলীর ছেলে নাসির উদ্দিন এক লক্ষ টাকার একটি চেক নিয়ে আমার বাড়ীতে যান। আমরা সেই চেক নিতে রাজী হইনি। এমনকি এখন পর্যন্ত সেই টাকাও পরিশোধ করেনি উজ্জলের পরিবার। বরং চাঁনপুর গ্রামের মৃত ছিদ্দেক আলীর ছেলে শায়েদ মিনহাজ সিদ্দিকী পল্লব ও জাবেদ মিনহাজ সিদ্দেকী সজিব, মৃত আহমদ আলীর ছেলে নাসির উদ্দিন, মৃত সিকন্দর আলীর ছেলে আব্বাছ আলী, মৃত মনোহর আলীর ছেলে মাহবুবুর রহমান মুকুল ও আব্বাছ আলীর ছেলে উজ্জল পূর্বভাগ গ্রামে আমার শশুর বাড়ি গিয়ে তাদেরকে হত্যার হুমকি দেন। আমি প্রাণের ভয়ে কুলাউড়া থানায় একটি অভিযোগ দিলে তারা আরো বেপরোয়া হয়ে উঠেন। বর্তমানে তিনি দুটি সন্তান নিয়ে সম্পূর্ণ নিরাপত্তাহীনতায় ভূগছেন বলেও জানান।
রোজিনা আক্তার বর্তমানে স্বামীর লাশ কবর থেকে উত্তোলন করে ময়নাতদন্তের জন্য আইনের আশ্রয় নিচ্ছেন। এ বিষয় জানতে চাইলে শালিসী বিচারক চাঁনপুর গ্রামের নাসির উদ্দিন জানান, প্রবাসে পিটিয়ে হত্যার কোন ঘটনা ঘটেনি। সিমু চৌধুরীর লাশ দেশে আসার পর আমি এই ধরনের কোন দায়িত্বও নেইনি। আমি এসব কিছু জানিনা। আমার ভাতিজা-ভাতিজি যারা এতিম হয়েছে সেই ছোট ছেলে মেয়েদের ভবিষ্যৎ চিন্তা করে আমরা আমাদের আপনজন থেকে কিছু টাকা পয়সা তুলে তাদের দেওয়ার চেষ্টা করেছিলাম মাত্র এর চেয়ে বেশী কিছু নয়। এনিয়ে কেউ যদি গেইম খেলে তাহলে আমাদের কিছু করার নেই।
PUBLISHED FROM
2152-B WESTCHESTER AVE BRONX
NEW YORK 10462 USA
Email : voiceofkulaura2@gmail.com
Chief Editor : Shafiq Chowdhury
Editor : Abdul Quayyum Mintu
Managing Editor : Nurul Islam Emon
Design and developed by positiveit.us