সমালোচনা কি, কেন এবং এর আদর্শ মানদ- কি?

প্রকাশিত: ১০:১৮ পূর্বাহ্ণ, মে ৩০, ২০২১

সমালোচনা কি, কেন এবং এর আদর্শ মানদ- কি?
booked.net

Manual8 Ad Code

অনেকে অনেক কিছুই বলবেন, সব যে আপনার আমার পছন্দ হবে তা কিন্তু নয় এবং এমনটা হওয়াও উচিৎ নয়। মানুষ প্রশংসা শুনতে ভালবাসে, এটি মানুষের একটি স্বভাবজাত চরিত্র। এখানে দোষ নেই। তবে আমাদের মনে রাখতে হবে, সমাজের সবাই সবার কাজ পছন্দ করবে না, আবার সবসময় সবার সব কাজ শুদ্ধও হবেনা এবং এটি হয়ও না।

কোনো কাজের ভালমন্দ নিয়ে মানুষ অবশ্যই সমালোচনা করবে, ভাল কাজের প্রশংসা করবে, মন্দকাজের নিন্দা জানাবে আবার বিভিন্নজন নানারকমের পরামর্শও দিবে। তাই প্রশংসা নিতে পারলে নিন্দাও হজমের মানসিকতা থাকতে হবে। আর ওগুলো তখনই হবে যখন কেউ রাষ্ট্র বা সমাজের একজন গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি হবে। সাধারণ কোনো ব্যক্তি বা তার কাজ নিয়ে সমাজের মাথাব্যাথা নেই, মানুষ মাথা ঘামাও না এটা আমরা জানি।

Manual7 Ad Code

আপনার চারিদিকের নিজস্ব লোক যদি সবসময় আপনার প্রশংসা করতে থাকে, তবে ভাববেন ওরা একসময় আপনাকে ডুবাবে। তোষামোদকারীদের তোষামোদ দ্বারা নিজের কর্মের মূল্যায়ন করা যায় না।

নিরপেক্ষ লোকের আলোচনা-সমালোচরা থেকে কাজের মান সম্পর্কে ধারণা পাওয়া যায়। কারণ আপনার পক্ষেবিপক্ষে সমালোচনা না থাকলে আপনি আপনার কাজের ভালমন্দ মূল্যায়ন করতে ব্যর্থ হবেন এবং একসময় এ ব্যর্থতার দায় অনেক বড় আকারে শোধ করতে হতে পারে। আর এরকম নিরপেক্ষমূলক সমালোচনার কাজটি সমাজের বিভিন্ন শ্রেণীর মানুষ থেকেই আসে। সমাজের দক্ষ, জ্ঞানী ও বিশেষজ্ঞ ব্যক্তিগণের সমালোচনাই কাজে আসে।

সমালোচনা কি?

সমালোচনা পরনিন্দা নয় আবার নিছক অর্থে পরচর্চাও নয়। আগেই বলেছি, সমালোচনা যে কেউই করতে পারে। সাধারণ জনগন, বিশেষজ্ঞ বিশ্লেষক, কোনো পণ্যের ক্রেতা বা কোনো ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানের সেবা গ্রহণকারী কিংবা দর্শক বা সুবিধাভোগী কোনো ব্যক্তি, যে হয়তো আপনাকে জানেইনা- সে আপনার কোনো কাজের বা সেবার কিংবা আপনাকে নিয়ে বা কোনা পণ্যের বিষয়ে সমালোচনা করতে পারে। অধিকাংশ মানুষ তার মতামত জানাতে ভালবাসে।

তাই বলা যায়, কোনো ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানের প্রতি বা তার কর্মের প্রতি গঠনমূলক আলোচনার মাধ্যমে মানুষ যে অভিমত বা মতামত বা সিদ্ধান্ত বা তদসাথে কোনো পরামর্শ দেয় তাই হলো সমালোচনা। সমালোচনা যিনি করেন তিনি সমালোচক।

Manual3 Ad Code

একটি আদর্শ সমালোচনার মানদন্ড বা বৈশিষ্ট

Manual8 Ad Code

১। যে সমালোচনার বিষয়বস্তুতে জনস্বার্থ জড়িত এবং অপরের মানহানী করার উদ্দেশ্য থাকেনা;

২। যে সমালোচনা পক্ষপাতহীন, বস্তুনিষ্ট এবং দিক নির্দেশক;

৩। যে সমালোচনা কোনো এক্সপার্ট কিংবা সংশ্লিষ্ট বিষয়ে বিশেষজ্ঞ কোনো ব্যক্তি দ্বারা করা হয়।

৪। যে সমালোচনায়, বিষয়বস্তুর ভালমন্দ দিকের যুক্তিসঙ্গত আলোচনা, ক্রুটিবিচ্যুতি এবং সফলতার উপদেশ ও পরিকল্পনার কথা বলা থাকে;
সমালোচনা আরোও অনেক বৈশিষ্ট আছে। মোদ্দাকথা, বিশেষজ্ঞ ব্যক্তি দ্বারা পক্ষপাতহীন ও দিকনির্দেশক কোনো সমালোচনাই হতে পারে একটি আদর্শ সমালোচনা।

আরো পড়ুনঃ কোন্ যাদুমন্ত্রে এঁরা মুসলিম আদর্শ থেকে সরে যাচ্ছে!

সমালোচনা সাদরে গ্রহণ করা উচিৎ

কোনো ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানের কোনো কাজ নিয়ে যখন সমাজে কথাবার্তা চলে তখন উক্ত ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানকে বুঝতে হবে যে তার বা তাদের কাজ বা কাজগুলো সমাজে একটি প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করতে পেরেছে। এতে বুঝা যাবে তার কাজটি মানুষ কিভাবে গ্রহণ করছে। কতভাগ মানুষ তার কাজকে ইতিবাচক আর কতভাগ মানুষ তা নেতিবাচক বা মিশ্রভাবে প্রতিক্রিয়া দেখাচ্ছে।

এক্ষেত্রে উক্ত ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানের উচিৎ হলো সমাজের উক্ত প্রতিক্রিয়া সাদরে গ্রহণ করে নিয়ে নিজের বা নিজেদের কর্মের মূল্যায়ন করা। এখানে তাদের জন্য কল্যাণ রয়েছে। সমালোচনার পর্যালোচনাদ্বারা তিনি বা তারা তাদের কাজের ভালমন্দের একটা মানদন্ড নির্ণয় করতে পারবেন এবং সেমতে ভবিষ্যৎ কাজাকে গণমুখী বা গ্রাহকমুখী করে তুলতে পারবেন। অর্থাৎ সমালোচনাটি কাজকে বাস্তবতায় নিয়ে যেতে সাহায্য করবে।

Manual8 Ad Code

তবে এক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিকে দেখতে হবে তার পণ্য বা কাজ সম্পর্কে যিনি সমালোচনা করছেন তার জ্ঞান ও দক্ষতার মানদন্ড সম্পর্কে। কারণ, একজন জ্ঞানী ও দক্ষ সমালোচকই কেবল দক্ষতার স্বাক্ষর রেখে একটি সুন্দর অর্থবহ সমালোচনা করতে পারেন। তিনি কেবল কোনো কিছুর নিছক সমালোচনাই করেননা সাথেসমালোচিত কাজের ভলমন্দ দিক তুলে ধরে ভবিষ্যতে কাজটি কীভাবে আরো সুন্দরভাবে করা যায় তার একটি পর্যবেক্ষণমূলক বক্তব্যও দিয়ে থাকেন। তিনি তার সমালোচনায় কখনো কোনো ব্যক্তির প্রতি আক্রমণাত্মক বক্তব্য রাখেননা বা ব্যক্তির চরিত্রহানির চেষ্টাও করেন না বরং যতটুকু সম্ভব সত্য তথ্যোদির উপর প্রতিষ্ঠিত থেকেই তার সমালোচনার কার্যটি চালান। তাই, সমালোচনা গ্রহণ ও বর্জনের ক্ষেত্রে সংশ্লিষ্টপক্ষের সথেষ্ট সতর্কতা থাকা উচিৎ।

সংশ্লিষ্টপক্ষ গঠনমূলক সমালোচনাগুলো গ্রহণ করে সমালোচনাকারীকে ধন্যবাদ জানিয়ে তার কর্মের উপযোগিতা বৃদ্ধি করবেন এবং অবিবেচক সমালোচনাগুলো থেকে দুরে থাকাই উচিৎ বলে বিশেষজ্ঞরা মনে করেন।

আবার অসুন্দর বা আক্রমণাত্মক সমালোচনাকারীদের সাথে সংঘাতে না গিয়ে এড়িয়ে চলতে পারলে সবচেয়ে ভাল হয়। কারণ, যার সমালোচনা করা হয় অবশ্যই তিনি কোনো গুরুত্ববহ ব্যক্তি হয়ে থাকেন। তাই তিনি তার মূল্যবান সময় নিন্দুকের পিছনে ব্যয় না করে নিজের পথচলাকে সুন্দরভাবে ভবিষ্যতের দিকে নিয়ে যাওয়াই উত্তম।

আবার যেক্ষেত্রে দেখা যায় যে, সমালোচনাকৃত বিষয়বস্তুরসঠিক তথ্য-উপাত্ত উপস্থাপনে সমালোচনাকারীর অনিচ্ছাকৃত ভূল হয়ে থাকে। সেক্ষেত্র বুদ্ধিমত্ত্বা দিয়ে প্রকৃত সত্য প্রকাশের জন্য পাল্টা বিবৃতি প্রদান করা আবশ্যক হয়ে পড়ে। তখন সেটিই করতে হয়। আবার সমালোচনাকারীকে সঠিক তথ্য সরবরাহ করলে তিনি তার লেখাটি সংশোধন করে পুনরায় প্রকাশ করে থাকেন।

ধন্যবান্তে, লেখক-
এড্ মোঃ আনোয়ারুল ইসলাম, বাংলাদেশ সুপ্রীমকোর্ট।
সাবেক সহসভাপতি (১৯৯৩-৯৪)- জাতীয় সাংবাদিক সংস্থা, ঢাকা।
প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি- জুড়ী প্রেসক্লাব(১৯৯৮), মৌলভীবাজার।

 

Ad

Follow for More!