প্রকাশিত: ৬:১০ পূর্বাহ্ণ, জানুয়ারি ২৭, ২০২৩
সুস্বাস্থ্য ও সুস্থতা মহান আল্লাহ তাআলার এক বিশেষ নেয়ামত। আমরা যদি এ নেয়ামতের শুকরিয়া আদায় না করি তাহলে আমরা হবো আল্লাহর অকৃতজ্ঞ বান্দা। কেননা প্রতিদিন বিভিন্ন রোগ-ব্যাধির কারণে হাজারও মানুষ পৃথিবী থেকে বিদায় নিচ্ছে। তাদের মধ্য থেকে আল্লাহ তাআলা আমাদের সুস্থ রেখেছেন। আলহামদুলিল্লাহ!
বিভিন্ন কারণে মানুষ অসুস্থ হতেই পারে। আমাদের আত্মীয়-স্বজন এবং পাড়া-প্রতিবেশী অসুস্থ হলে তাদের জন্য কিছু করণীয় রয়েছে। অসুস্থ ব্যক্তিদের দেখতে যাওয়া, তাদের সেবা শুশ্রূষা করা, তাদের জন্য উপযুক্ত খাদ্য সামগ্রী নিয়ে যাওয়া এবং তাদের খোঁজ-খবর নেয়া রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের অনন্য সুন্নাত।
যারা বিশ্বনবী সাল্লাল্লাহ আলাইহি ওয়া সাল্লামের অনুসরণে অসুস্থ ব্যক্তিদের দেখতে যায়, তার জন্য ফেরেশতারা দোয়া করেন। হাদিসে এসেছে-হজরত আলি রাদিয়াল্লাহু আনহু বলেন, আমি রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে বলতে শুনেছি, ‘যে ব্যক্তি সকালে কোনো মুসলমান রোগীকে দেখতে যায়, সত্তর হাজার ফেরেশতা সন্ধ্যা পর্যন্ত তার জন্য নেক দোয়া করতে থাকেন। যে ব্যক্তি সন্ধ্যায় কোনো মুসলমান রোগীকে দেখতে যায়, পরদিন সকাল পর্যন্ত নেক দোয়া করতে থাকেন। আর ওই ব্যক্তিকে জান্নাতের একটি বাগান দান করা হয়।’ (তিরমিজি)
রোগীর সেবা-যত্নে রয়েছে মহান প্রভুর সন্তুষ্টি। রোগীর সেবা-যত্ন করাকে আল্লাহ ও তার রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম অনেক পছন্দ করতেন। এমনকি অসুস্থ ব্যক্তির সেবা-যত্নকে স্বয়ং আল্লাহ তাআলার সেবা-যত্নের সঙ্গে তুলনা করা হয়েছে। সুবহানাল্লাহ! হাদিসে এসেছে-হজরত আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেন রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, আল্লাহ তাআলা কেয়ামতের দিন মানুষকে ডেকে বলবেন- হে আদম সন্তান! আমি অসুস্থ হয়েছিলাম, তখন তুমি আমাকে দেখতে (সেবা-যত্ন করতে) আসনি।
মানুষ বলবে- হে প্রভু! আপনি রাব্বুল আলামিন, আমি কিভাবে আপনার সেবা করব? আল্লাহ বলবেন, তুমি কি জানতে পারনি যে, আমার অমুক বান্দা অসুস্থ ছিল; কিন্তু তখন তুমি তাকে দেখতে যাওনি। তুমি কি জানতে না যে, তুমি যদি তাকে (অসুস্থ ব্যক্তিকে) দেখতে যেতে (সেবা-যত্ন করতে) তাহলে সেখানে আমার দেখা পেতে? (মুসলিম ও মিশকাত)
রোগীর সেবা-যত্ন করার মাধ্যমেই আমরা সহজেই আল্লাহর সন্তুষ্টি লাভ করতে পারি। আমরা যখন কোন রোগীকে দেখতে যাব তখন তার ভালো কাজগুলো স্মরণ করে কথা বলতে পারি। অসুস্থ ব্যক্তির পাশে ভালো কথা বলায় রয়েছে তাদের জন্য কল্যাণ। হাদিসে এসেছে-রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, ‘যখন তুমি কোনো রোগীর কাছে যাবে কিংবা মরণোন্মুখ ব্যক্তির কাছে যাবে, তখন তার সঙ্গে মঙ্গলজনক কথাবার্তা বলো। কেননা তুমি যা বল, ফেরেশতাগণ তার (ওই ভালো কথার) ওপর আমিন আমিন বলতে থাকে।’ (মুসলিম ও মিশকাত)
অসুস্থ ব্যক্তিদের দেখতে যাওয়া ও তাদের সেবার করায় অনেক পুণ্য নিহিত। এমনকি আকাশ থেকে ফেরেশতাও তার জন্য দোয়া করতে থাকেন। যেভাবে হাদিসে এসেছে-হজরত আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, ‘যে ব্যক্তি কোনো অসুস্থ ব্যক্তিকে দেখতে যায়, তখন আকাশ থেকে একজন ফেরেশতা তাকে লক্ষ্য করে বলতে থাকে, মোবারক হও তুমি এবং মোবারক হোক তোমার এই পথ চলা এবং তুমি জান্নাতে একটি স্থান করে নিলে।’ সুবহানাল্লাহ! (ইবনে মাজাহ)
রোগীকে দেখতে গিয়ে তাকে সাহস যোগানো। সুস্থ হয়ে যাবে মর্মে উৎসাহ দেয়াও প্রিয় নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের অন্যতম সুন্নাত। কেননা তার উৎসাহ দেয়া অসুস্থ ব্যক্তি প্রাণচাঞ্চল্য ফিরে পাবে। সাহস পাবে এবং আল্লাহর রহমত সুস্থ হয়ে ওঠবে। হাদিসে এসেছে– হজরত ইবনে আব্বাস রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম একজন বেদুঈনকে দেখতে গেলেন। আর তার নিয়ম এই ছিল যে, যখন তিনি কোনো রোগীকে দেখতে যেতেন তখন (রোগীকে উৎসাহ ও সাহস দিতে) বলতেন-لَا بَاْسَ طُهُوْرَ اِنْ شَاءَ اللهُউচ্চারণ : ‘লা বাসা তুহুরা ইনশাআল্লাহ’অর্থ : ‘ভয়ের কোনো কারণ নেই, আল্লাহর ইচ্ছায় সুস্থ হয়ে যাবে।’ (বুখারি, মুসলিম, মিশকাত)
হজরত আয়েশা রাদিয়াল্লাহু আনহা বলেন, আমাদের মধ্যে কেউ যখন অসুস্থ হতো তখন রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তার ডান হাত রোগীর শরীরে বুলাতেন এবং বলতেন-اَللَّهُمَّ اَذْهِبِ الْبَاْسَ رَبَّ النَّاسِ اِشْفِهِ وَ اَنْتَ الشَّافِىْ لَا شِفَاءَ اِلَّا شِفَاءٌكَ لَّا يُغَادِرُ سُقْمًاউচ্চারণ : ‘আল্লাহুম্মা আজহিবিল বাসা রাব্বান্নাসি ইশফিহি ওয়া আংতাশ শাফি লা শিফাআ ইল্লা শিফাউকা লা ইয়ুগাদিরু সুক্বমা।’অর্থ : ‘হে আল্লাহ! এ কষ্টকে দূর করে দাও। হে মানুষের প্রভু! তাকে সুস্থতা দান কর। তুমিই সুস্থতা দানকারী। তুমি ছাড়া আর কারো কাছে সুস্থতার আশা নেই। এমন সুস্থতা দান কর যে, রোগের নাম নিশানাও না থাকে।’ (বুখারি ও মুসলিম)
আল্লাহ রাব্বুল আলামিনের কাছে প্রার্থনা, তিনি যেন অসুস্থদের আরোগ্য দান করেন। বিশ্বনবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের নির্দেশনা অনুযায়ী অসুস্থ ব্যক্তির সেবা-যত্ন করার তাওফিক দান করেন। আমিন।
PUBLISHED FROM
2152-B WESTCHESTER AVE BRONX
NEW YORK 10462 USA
Email : voiceofkulaura2@gmail.com
Chief Editor : Shafiq Chowdhury
Editor : Abdul Quayyum Mintu
Managing Editor : Nurul Islam Emon
Design and developed by positiveit.us