কুলাউড়া সীমান্তের ২০ পয়েন্ট দিয়ে দেশে আসে মাদকদ্রব্য।

প্রকাশিত: ৫:৪৫ অপরাহ্ণ, মে ২৭, ২০২১

কুলাউড়া সীমান্তের ২০ পয়েন্ট দিয়ে দেশে আসে মাদকদ্রব্য।
booked.net

Manual2 Ad Code

আব্দুল কুদ্দুসঃ- কুলাউড়ায় মাদক ব্যবসায়ীদের আধিপত্য ক্রমশঃ বৃদ্ধি পাচ্ছে। উপজেলার সীমান্ত এলাকা দিয়ে নিষিদ্ধ ভারতীয় নাসির বিড়ির সাথে দেশে প্রবেশ করছে মাদকও।

সীমান্তের প্রায় ২০টি পয়েন্ট দিয়ে দেদারছে আসছে ইয়াবা, মদ, গাঁজা, ফেনসিডিল, হেরোইনসহ বিভিন্ন মাদকদ্রব্য।

সীমান্তে ভারতীয় সিম ব্যবহার করে বাংলাদেশি-ভারতীয় মাদক ব্যবসায়ীদের আলাপচারিতায় আনা হয় এসব মাদকদ্রব্য। আর এসব মাদকদ্রব্য একাধিক হাতবদল শেষে জেলাসদর হয়ে সড়ক পথে চলে যায় দেশের বিভিন্ন প্রান্তে।

নিরাপদ জোন হিসেবে উপজেলার পৃথিমপাশা, কর্মধা, হাজিপুর ও শরীফপুর ইউনিয়নের র্স্পশকাতর জায়গুলোতে রয়েছে চোরাকারবারিদের নিজস্ব বলয়।

বাংলাদেশি মাদক ব্যবসায়ীরা সীমান্তের লোকজনকে অর্থের প্রলোভন দেখিয়ে মাদকদ্রব্য নিরাপদ জায়গায় নিয়ে যাচ্ছে। বিজিবি কিংবা পুলিশের অজানা নয় এমন কর্মকান্ড।

একটি সূত্র জানায়, মাদক ব্যবসায়ীরা ফোনে যোগাযোগ করে দিনে বা রাতের বেলায় ক্রিকেট বলের মতো স্কচ টেপ পেঁচিয়ে, সিগারেটের প্যাকেটে করে, প্লাস্টিকের ছোট ছোট প্যাকেটে ভরে মাদকদ্রব্য কাঁটাতারের ওপর দিয়ে ঢিল মেরে ফেলে দেয়।

আর বহনকারীরা সংকেত পেয়ে কৃষক বা রাখালের ছদ্মবেশে এসব মাদক নিয়ে আসছে অনায়াসে। তবে এর আগে কুলাউড়া থেকে ভারতে টাকা পৌঁছায় মাত্র ৫ মিনিটে।

আরো পড়ুনঃ ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করলেন ব্রিটিশ অভিনেত্রী আয়েশা রোজালি।

অনুসন্ধানে জানা যায়, মাদক ক্রয়-বিক্রয়ের জন্য হুন্ডির মাধ্যমে বিপুল পরিমাণ অর্থ লেনদেন করে মাদক ব্যবসায়ীরা।

দেশের বিভিন্ন অঞ্চলের সিন্ডিকেট চক্র হুন্ডির মাধ্যমে বাংলাদেশী টাকা হাত বদলে রুপী হয়ে যাচ্ছে ভারতে। কুলাউড়ার মধ্যে মাদক কারবারীদের টাকা হুন্ডিতে ভারতে পাঠাচ্ছে মাত্র ২ জন হুন্ডি ব্যবসায়ী। তন্মধ্যে কুলাউড়া শহরের প্রাণ কেন্দ্রের একটি ডিপার্টমেন্টাল স্টোরের সত্ত্বাধিকারী ও রবিরবাজারস্থ লামাবাজরের ভারতীয় নাসির বিড়ির এক ব্যবসায়ী রয়েছেন।

তবে হুন্ডিতে রবিরবাজারের ওই ব্যবসায়ীর তুলনায় দ্রুত গতীতে ভারতে টাকা পাঠায় বলে মাদক ব্যবসায়ী বা চোরাকারবারীদের কাছে বেশ জনপ্রিয় কুলাউড়ার ওই ডিপার্টমেন্টাল স্টোর।

এখানে প্লাস্টিকের দৃশ্যমান ব্যবসা থাকলেও আড়ালে চলে বড় অঙ্কের হুন্ডির লেনদেন। মাদক ব্যবসায়ীদের মনের ভেতরে হুন্ডি ব্যবসায় আস্থা করে নিয়েছেন ওই ডিপার্টমেন্টাল স্টোরের সত্ত্বাধিকারী।

আর একাধিক মাদক মামলার আসামী রবিরবাজারের ছালেক বর্তমানে জনপ্রিয় বিড়ি ব্যবসায়ী। দৃশ্যমান পান-সুপারির ব্যবসা থাকলেও আড়ালে হুন্ডি, বিদেশী সিগারেট ও ভারতীয় নিষিদ্ধ নাসির বিড়ির রমরমা ব্যবসা চলছে দোকানে। স্থানীয় কামাল মার্কেটে রয়েছে নিষিদ্ধ পণ্যের গোদাম। ছালেকের গোদামে র‌্যাব একাধিকবার ঝটিকা অভিযান চালিয়ে জব্দ করে নাসির বিড়ি ও বিদেশী সিগারেট।

একটি দায়িত্বশীল সূত্র জানায়, মাদকের গডফাদাররা আড়ালে বসে চোরাচালান নিয়ন্ত্রণ করে থাকে। মাদকের টাকা অটোমেটিক্যালি গডফাদারদের কাছে চলে যায়। অন্তরালে থেকেই মাদক ব্যবসায়ীদের বিভিন্নভাবে শেল্টার দিয়ে থাকে গডফাদাররা।

বড় বড় মাদকের ডিলাররা থাকে ধরা ছোঁয়ার বাইরে। ধরা পড়ে মূলত বহনকারী ও খুচরা ব্যবসায়ীরা।

Manual5 Ad Code

এছাড়াও লেনদেনের বিষয়টি আড়াল করতেই কোনও একটি প্রতিষ্ঠানের কর্মকান্ড দেখিয়ে আসছে একটি চক্র। খুচরা মাদক ব্যবসায়ী থেকে শুরু করে বড় বড় ডিলার পর্যন্ত একটা চেইন মেন্টেন করে কুলাউড়া থেকে হুন্ডির মাধ্যমে মাদকের টাকা লেনদেন করে।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে চোরাকারবারীর সাথে সম্পৃক্ত এক যুবক জানায়, প্রতিদিনেই সীমান্ত এলাকার ২০টি পয়েন্ট দিয়ে আসছে বিপুল পরিমাণ মাদক।

মাদক ক্রয় করতে কুলাউড়া থেকে ভারতে টাকা পাঠানো হয়। হুন্ডির মাধ্যমে টাকা পাঠানোর পর ভারত থেকে দিনে কিংবা রাতে সুযোগ বুঝে আনা হয় ইয়াবা, মদ, গাঁজা, ফেনসিডিল, হেরোইনসহ বিভিন্ন মাদকদ্রব্য।

Manual3 Ad Code

তবে পরিবহনে সহজ হওয়ায় সবচেয়ে বেশি আসছে ইয়াবা। আর মাদক পাচারে ব্যবহার করা হচ্ছে সীমান্তবর্তী এলাকার গরিব-নিরীহ মানুষদের। মাদক বহনে ব্যবহার হচ্ছে নারী-পুরুষ, যুবক, কিশোর ও শিশুদের। এতে করে মাদক প্রতিরোধে এক প্রকার হিমশিম খেতে হচ্ছে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীদের।

চলতি মাসের শেষের দিকে পৃথিমপাশা ইউনিয়নের সদপাশা এলাকার মুরইছড়া ত্রিমুহনীর মারজান ভ্যারাইটিজ স্টোর এর সম্মুখস্থ রাস্তা থেকে ৩৫৮ পিস ইয়াবা জব্দসহ পেশাদার মাদক কারবারি কর্মধা ইউনিয়নের পূর্বটাট্টিউলি গ্রামের মৃত মোবারক আলীর ছেলে মো. চেরাগ আলী (৩০) কে আটক করে র‍্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র‍্যাব)। তার বিরুদ্ধে র‍্যাব মাদকদ্রব্য আইনে মামলা দায়ের করে কুলাউড়া থানায়।

একাধিক সূত্র, মাদক ব্যবসায়ী ও মাদকসেবনকারীরা জানায়, মাদক আসার প্রধান উৎসই হলো হুন্ডির টাকা। এই হুন্ডির টাকা বন্ধ করা গেলেই মাদক ব্যবসা অনেকাংশে কমে যাবে।

বর্তমানে কুলাউড়ার সীমান্ত এলাকার ইয়াবা চালানের মূলহোতা মুরইছড়া নতুন বস্তি (দশটেকি) গ্রামের বাসিন্দা মউর মিয়া। তার বিরুদ্ধে রয়েছে একাধিক মাদক মামলা। সীমান্ত এলাকায় বসবাস হওয়ার সুবাধে গড়ে তুলেছে ত্রাসের রাজত্ব। সীমান্ত এলাকা আলীনগর, আমুলী, গনকিয়া, শিখড়িয়া, মুরইছড়া, ধলিয়া গ্রামে রয়েছে মউর মিয়ার নিজস্ব বলয়। সে সব মাদক সিন্ডিকেটের সাথে জড়িত। তার লোকজন দিয়ে ইয়াবাসহ মাদকের বড় বড় চালান পার করে নিয়ে আসে ভারত থেকে। একই এলাকার আতাই, আনফরের মাদকের ব্যবসা রয়েছে। ধলিয়া গ্রামের ইছাক, আব্দুল, আহাদ আলী, গনকিয়া গ্রামের মনাই মিয়ার সরাসরি মাদক ব্যবসা রয়েছে ভারতের সাথে। আর কর্মধা এলাকায় ভারত থেকে ইয়াবাহ নিয়ে আসে কর্মধা গ্রামের ফুল মিয়া। তার বিরুদ্ধে রয়েছে কুলাউড়া থানায় মাদক আইনে মামলা।

Manual1 Ad Code

কুলাউড়া থানার অফিসার ইনচার্জ বিনয় ভূষন রায় বলেন, হুন্ডির বিষয়টি আমি খতিয়ে দেখবো।

তিনি বলেন- মাদক ব্যবসায়ীদের যারা হুন্ডিতে লেনদেনে সহায়তা করছে তাদের বিরুদ্ধে আমরা অবশ্যই কঠোরভাবে ব্যবস্থা নিবো।

Manual3 Ad Code

এ সংক্রান্ত আরও সংবাদ

Ad

Follow for More!