প্রকাশিত: ৫:৩০ পূর্বাহ্ণ, ফেব্রুয়ারি ২৬, ২০২৩
আন্তর্জাতিক ডেস্কঃ- আফ্রিকার দেশ নাইজেরিয়ায় সামরিক শাসন অবসানের পর সবচেয়ে প্রতিদ্বন্দ্বিতামূলক প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে ভোট গ্রহণ আনুষ্ঠানিক ভাবে শেষ হয়েছে। চলছে ভোট গণনা । তবে ফলাফল প্রকাশে আরও কয়েকদিন সময় লাগবে। খবর বিবিসি।
নিরাপত্তা আশঙ্কা এবং ব্যবস্থাপনার সমস্যাকে এই বিলম্বের জন্য দায়ী করা হচ্ছে। অপরাধী চক্রগুলো কিছু ভোটদান কেন্দ্রের ওপর হামলা চালিয়ে ভোট দেবার মেশিন নিয়ে পালিয়ে গেছে।
নাইজেরিয়ার এই নির্বাচন আফ্রিকার দেশগুলোর মধ্যে সর্ববৃহৎ গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়া, যেখানে ভোট দেবার যোগ্য মানুষের সংখ্যা ৮ কোটি ৭০ লাখ। দেশটিতে ১৯৮৯ সালে সামরিক শাসনের অবসান ঘটার পর থেকে রাজনীতির অঙ্গনে প্রাধান্য পেয়ে আসছে মূলত দুটি দল- ক্ষমতাসীন এপিসি এবং পিডিপি।
কিন্তু এবারের নির্বাচনে প্রেসিডেন্ট মুহাম্মাদু বুহারির উত্তরসূরী হিসাবে তৃতীয় আরেকটি দলের প্রার্থীর দিক থেকে বড় ধরনের চ্যালেঞ্জ তৈরি হয়েছে। এই প্রার্থী হলেন লেবার পার্টির পিটার ওবি, যাকে সমর্থন করছে বহু তরুণ ভোটার।
কিছু কিছু ভোটার গণমাধ্যমের কাছে অভিযোগ করেছেন, তাদের ভোটদান কেন্দ্র গুলো নির্বাচন শেষ হবার দুঘণ্টা আগে পর্যন্তও খোলা হয়নি।
কোন কোন এলাকায় ভোট দেবার মেশিন কাজ না করার অভিযোগ এসেছে। এসব এলাকায় ভোটারদের ফিরে যেতে এবং পরে আবার আসতে বলা হয়েছে।
এক সংবাদ সম্মেলনে নির্বাচন প্রধান মাহমুদ ইয়াকুবু নির্বাচনে বিলম্বের জন্য দুঃখপ্রকাশ করেছেন। তবে বলেছেন যারা দুপুর দেড়টার মধ্যে লাইনে দাঁড়িয়েছেন তাদের প্রত্যেককে ভোট দেবার অনুমতি দেওয়া হবে। এমনকি ভোটদান কেন্দ্র বন্ধ করে দেবার সরকারি সময় পার হয়ে গেলেও।
ইয়াকুবু আরও বলেছেন, দক্ষিণের রাজ্য ডেলটা এবং উত্তরের কাটসিনা রাজ্যে সশস্ত্র ব্যক্তিরা কিছু ভোটদান কেন্দ্রের ওপর চড়াও হয়ে ভোটার পরিচয়পত্র যাচাই করার যন্ত্রপাতি গাড়িতে উঠিয়ে নিয়ে পালিয়ে গেছে।
পরে ওই কেন্দ্রগুলোতে নতুন যন্ত্র নিয়ে আসা হয়েছে এবং নিরাপত্তা আরও জোরদার করে ভোটদান সম্পন্ন করা হয়েছে বলে তিনি জানিয়েছেন।
নাইজেরিয়ার সবচেয়ে বড় শহর লেগোস থেকে সহিংসতা এবং ব্যালটবাক্স ছিনতাইয়ের খবর পাওয়া গেছে।
মি. ইয়াকুবু জানিয়েছেন উত্তর পূর্বে বোর্নো রাজ্যের গোওযা এলাকায় একটি পাহাড়ের মাথা থেকে ইসলামী জঙ্গীরা নির্বাচনী কর্মকর্তাদের ওপর গুলি চালিয়েছে। বেশ কয়েকজন কর্মকর্তা জখম হয়েছেন।
নির্বাচনের ঠিক আগে নতুন নক্সার মুদ্রা চালু করার এক প্রচেষ্টার কারণে নগদ অর্থের ব্যাপক ঘাটতি দেখা দেয়। ফলে ব্যাংক এবং ক্যাশ মেশিনগুলোয় ব্যাপক মানুষ তাদের অর্থ তুলে নেবার জন্য হুড়োহুড়ি শুরু করলে ব্যাপক বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি হয়।
মুদ্রাস্ফীতি সামাল দেবার জন্য, সেইসঙ্গে ভোট কেনা বন্ধ করার জন্য নতুন নোট বাজারে ছাড়ার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছিল।
নির্বাচনের আগের দিন সংসদের হাউস অফ রেপ্রেজেনটিটিভ -এর একজন সদস্য প্রায় পাঁচ লাখ ডলার অর্থ সহ গ্রেপ্তার হয়েছেন। পুলিশ বলছে ওই অর্থ কাদের দেওয়া হবে তার একটি তালিকাও ওই সংসদ সদস্যের কাছ থেকে জব্দ করা হয়েছে।
প্রেসিডেন্ট পদে যিনি নির্বাচিত হবেন তার জন্য মূল চ্যালেঞ্জ গুলো হবে নতুন মুদ্রা চালু করা, ধসে পড়া অর্থনীতি সামাল দেওয়া, তরুণদের মধ্যে চড়া বেকারত্বর মোকাবেলা, এবং নিরাপত্তার ব্যাপক অভাব কঠোরহাতে দমন করা। নিরাপত্তার অভাবে গত বছর ১০ হাজার মানুষ নাইজেরিয়ায় প্রাণ হারিয়েছে।
এবারের নির্বাচনে নাইজেরিয়ার তরুণদের মধ্যে ব্যাপক উৎসাহ চোখে পড়েছে। দেশটিতে ভোটদানের যোগ্যতা সম্পন্ন জনসংখ্যার এক তৃতীয়াংশই তরুণ, যাদের বয়স ৩৫এর নিচে। ফলে ধারণা করা হচ্ছে ২০১৯এ যে মাত্র ৩৫% ভোট পড়েছিল এবার ভোট পড়বে তার থেকে অনেক বেশি।
ধারণা করা হচ্ছে, ৬১ বছর বয়স্ক দেশটির রাজনীতিতে দুটি প্রধান দলের যে প্রাধান্য গত প্রায় ২৪ বছর ধরে রয়েছে তা ভাঙতে সক্ষম হবেন। তিনি গত মে মাসে নাইজেরিয়ার লেবার পার্টিতে যোগ দেবার পর রাজনীতির পুরনো ধারায় পরিবর্তনের হাওয়া লেগেছে।
যদিও ওবি আগে পিডিপি দলের সদস্য ছিলেন কিন্তু রাজনীতিতে তিনি তুলনামূলকভাবে নতুন মুখ এবং দেশের তরুণ জনগোষ্ঠির মধ্যে তার বিপুল জনপ্রিয়তা তৈরি হয়েছে।
তিনি বিত্তশালী ব্যবসায়ী এবং দক্ষিণ পূর্বের আনাম্ব্রা রাজ্যে ২০০৬ থেকে ২০১৪ পর্যন্ত তিনি গর্ভনরের দায়িত্ব পালন করেছেন। তার সমর্থকরা তাকে একমাত্র সৎ প্রার্থী হিসাবে তুলে ধরেছেন। ভোট গ্রহণ শেষ গণনা চলছে ফলাফলে কয়েকদিন সময় লাগবে
অন্যদিকে ২০১৫ সাল পর্যন্ত ক্ষমতায় থাকা দল পিডিপি দল থেকে প্রার্থিতা করছেন ৭৬ বছর বয়স্ক আবুবকর। দেশটির মুসলিম প্রধান উত্তরাঞ্চল থেকে তিনি সবচেয়ে জোরালো প্রতিদ্বন্দ্বী।
আগেও তিনি পাঁচবার প্রেসিডেন্ট পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে হেরে গেছেন। তার বিরুদ্ধে দুর্নীতি এবং স্বজনপোষণের অভিযোগ আছে, যা তিনি অস্বীকার করেন।
দেশটির গরিষ্ঠসংখ্যক মানুষ এই নির্বাচনকে ক্ষমতাসীন এপিসি দলের ওপর গণভোট হিসাবে দেখছে। কঠিন অর্থনৈতিক অবস্থা এবং নিরাপত্তার ক্রমাবনতি নিয়ে সরকারকে হিমশিম খেতে হয়েছে।
এই দলের প্রার্থী হয়েছেন ৭০ বছর বয়স্ক টিনুবু, যিনি ২০০৭ সাল পর্যন্ত দুই মেয়াদে লেগোসের গর্ভনর পদে থাকাকালীন সেই শহরকে দেশটির বাণিজ্যিক প্রাণকেন্দ্র হিসাবে গড়ে তুলেছেন।
দক্ষিণ পশ্চিমে তাকে রাজনীতির একজন ‘গডফাদার’ হিসাবে দেখা হয়, তবে আবুবকরের মত তার বিরুদ্ধেও দুর্নীতির নানা অভিযোগ আছে, যেসব অভিযোগ তিনিও অস্বীকার করেন।
নাইজেরিয়ার ৩৬টি রাজ্যের দুই তৃতীয়াংশ ভোটের ২৫% যে প্রার্থী পাবেন এবং যিনি এককভাবে সবচেয়ে বেশি ভোট পাবেন তিনি বিজয়ী ঘোষিত হবেন।
উল্লেখ্য যে, দেশটির কোন প্রার্থী নির্ধারিত সংখ্যক ভোট না পেলে ২১ দিনের মধ্যে দ্বিতীয় দফা ভোটাভুটি হবে।
ছবিঃ- ভোট দিচ্ছেন ভোটাররা।
PUBLISHED FROM
2152-B WESTCHESTER AVE BRONX
NEW YORK 10462 USA
Email : voiceofkulaura2@gmail.com
Chief Editor : Shafiq Chowdhury
Editor : Abdul Quayyum Mintu
Managing Editor : Nurul Islam Emon
Design and developed by positiveit.us