নামাজে মনোযোগ ও একাগ্রতা।

প্রকাশিত: ৫:৪৭ পূর্বাহ্ণ, মার্চ ৭, ২০২৩

নামাজে মনোযোগ ও একাগ্রতা।
booked.net

Manual4 Ad Code

ঈমানের পর সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ইবাদত নামাজ। পবিত্র কোরআনের বহু আয়াতে আল্লাহতায়ালা নামাজের আদেশ দিয়েছেন। নামাজে নম্রতা, একাগ্রতা ও ধীরস্থিরতা অবলম্বনের কারণে পুরস্কারের ঘোষণা দিয়েছেন। নামাজে অবহেলাকারী ও অমনোযোগীকে তিরস্কার এবং নিন্দা করেছেন। নামাজ হতে হয় প্রাণবন্ত ও সৌন্দর্যপূর্ণ। বিনয় ও আল্লাহমুখিতা নামাজের প্রাণ। নামাজে যিনি যত বেশি আল্লাহমুখী তার নামাজ ততই প্রাণবন্ত। খুশুখুজু বা বিনয় ও একাগ্রতা নামাজের সৌন্দর্য। নামাজে যার মনোযোগ যত বেশি, তার নামাজ ততই গ্রহণযোগ্য।

আল্লাহতায়ালা ঈমানদারের উত্তম গুণাবলি উল্লেখ করে পবিত্র কোরআনে ইরশাদ করেন, ‘সেসব মুমিন সফল হয়েছেন, যারা নিজেদের নামাজে বিনয়ী ও একাগ্র।’ (সুরা মুমিনুন, আয়াত : ১-২) এই আয়াতে ইমানদারের মধ্যে তাদের-ই সফল হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে, যারা নামাজে বিনয় ও একাগ্রতা অবলম্বন করেন। যাদের খুশুখুজু অর্থাৎ অন্তর ও অঙ্গপ্রত্যঙ্গের স্থিরতা রয়েছে। অন্তরের স্থিরতা হলো নামাজে দাঁড়িয়ে শুধু আল্লাহর ভয়ে তারই দিকে মনকে নিবিষ্ট রাখা। আর নামাজে থাকা অবস্থায় অঙ্গপ্রত্যঙ্গগুলো অনর্থক নড়াচড়া থেকে বিরত রাখা হলো অঙ্গপ্রত্যঙ্গের স্থিরতা।

Manual7 Ad Code

নামাজে খুশুখুজুর বড় পুরস্কার হলো পার্থিব জগতে ও পরকালে সফলতা। বিশেষত জান্নাতুল ফেরদাউসের অধিকারী হওয়া। নামাজে বিনয় অবলম্বনকারীদের পুরস্কার ঘোষণা করে আল্লাহতায়ালা বলেন, ‘এরূপ লোকরা উত্তরাধিকারী; যারা জান্নাতুল ফেরদাউসের উত্তরাধিকারী হবেন এবং সেখানে অনন্তকাল থাকবেন।’ (সুরা মুমিনুন, আয়াত : ১০-১১)

আরেকটি বিষয় হলো নামাজের হেফাজত করা। নামাজ পড়া যেমন জরুরি, তেমনি নামাজের হেফাজত করাও জরুরি। আল্লাহতায়ালা সুরা মুমিনুনে বলেন, ‘এবং যারা নিজেদের নামাজগুলোর হেফাজত করে।’ (সুরা মুমিনুন, আয়াত : ৯) এই আয়াতেও সফল মুমিনের পরিচয় আলোচনা করে বলা হয়েছে, যারা নামাজের হেফাজত করে, তারাই সফল মুমিন। কিন্তু নামাজ হেফাজত করার অর্থ কী? তাফসিরবিদরা বলেছেন, নামাজ হেফাজতের কয়েকটি অর্থ রয়েছে যেমনঃ-

Manual5 Ad Code

এক. নামাজের গুরুত্ব দেওয়া। নিয়মিত প্রতিদিন পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ গুরুত্বসহকারে আদায় করা। এক নামাজের পর অন্য নামাজের জন্য অপেক্ষা করা। মনে চাইলে পড়লাম, মনে চাইল পড়লাম না এমনটা না করা। এক দিন পড়লাম, আরেক দিন বাদ দিলাম; এক ওয়াক্ত পড়লাম, আরেক ওয়াক্ত ছেড়ে দিলাম এভাবে নামাজের প্রতি উদাসীনতা প্রকাশ পায়।

দুই. নির্ধারিত সময়ে নামাজ পড়া। পাঁচ ওয়াক্ত নামাজের জন্য পাঁচটি সময় নির্ধারিত রয়েছে। যেমন সুবহে সাদিক থেকে সূর্যোদয় পর্যন্ত ফজর নামাজের সময়। দ্বি-প্রহর থেকে বস্তুর ছায়া দ্বিগুণ হওয়া পর্যন্ত জোহর নামাজের সময়। জোহরের শেষ সময় থেকে সূর্যাস্ত পর্যন্ত আসর নামাজের সময়। এভাবে প্রতিটি নামাজের একটি নির্ধারিত সময় রয়েছে। নির্ধারিত সময়ের মধ্যে নামাজ আদায় করা। নির্ধারিত সময়ের পর বা অলসতা করে শেষ সময়ে এসে নামাজ পড়লে নামাজের হেফাজত হয় না।

 

Manual7 Ad Code

তিন. জামাতে নামাজ আদায় করা। নামাজ হেফাজতের আরেকটি অর্থ হলো জামাতের সঙ্গে নামাজ আদায় করা। যদিও হানাফিরা জামাতে নামাজ আদায় করাকে ওয়াজিবের কাছাকাছি সুন্নতে মুয়াক্কাদা বলে থাকেন। কিন্তু অনেক ফিকাহবিদ জামাতে নামাজ পড়া ওয়াজিব বলেছেন। সুতরাং ঘরে একাকী নামাজ না পড়ে মসজিদে জামাতে নামাজ পড়লে নামাজের হেফাজত হয়।

আমাদের সমাজে এমন বহু মুসলমান রয়েছেন, যারা শুক্রবার ছাড়া মসজিদে যান না। অনেকে ঘরে বা অফিসে একাকী নামাজ পড়েন, আবার অনেকে পড়েনও না। সপ্তায় এক দিন মসজিদে হাজির হওয়া-ই যথেষ্ট মনে করেন। এটি মুসলমানের রীতি নয়। সপ্তাহে এক দিন মসজিদে হাজির হওয়া মুসলমানের চরিত্রের সঙ্গে যায় না। মুসলমান দৈনিক অন্তত পাঁচবার আল্লাহর ঘরে হাজির হন। মুসলমানের উচিত পূর্ণাঙ্গভাবে ইসলামের বিধান অনুসরণ করা।

নবীজি (সা.)-এর যুগে শুধু মুনাফিকরা মসজিদের জামাতে হাজির হতো না। মুনাফিকদের অন্তরে যেহেতু ঈমান ছিল না, তাই নানা টালবাহানা করে তারা জামাতে আসত না। কিন্তু সাহাবায়ে কিরাম ভুলেও কল্পনা করতেন না যে, জামাত ছেড়ে একাকী নামাজ পড়বেন।

এক দিন নবীজি (সা.) ইরশাদ করলেন, ‘আমার মনে চায় এক দিন আমার যুবকদের কাঠের স্তূপ জমা করার নির্দেশ দিই, অতঃপর নামাজের ইমামতিতে অন্য কাউকে দাঁড় করিয়ে দিই; তাদের বলি, তোমরা নামাজ শুরু করে দাও; তারপর আমি লোকদের বাড়ি বাড়ি গিয়ে দেখি কারা কারা ঘরে বসে আছে, মসজিদে হাজির হয়নি। আমার মনে চায়, যারা মসজিদে জামাতে উপস্থিত হয়নি, তাদের বাড়িঘর আগুনে জ্বালিয়ে দিই।’ (তিরমিজি, হাদিস : ২১৭)

Manual3 Ad Code

ঈমানদারের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ কাজ নামাজ। নামাজে যার অবহেলা, সে ইসলামের অন্যান্য বিধানও পালন করে না। নামাজে যে যত বেশি যত্নবান, সে ইসলামের অন্যান্য বিধান পালনে তত বেশি মনোযোগী হয়ে থাকে। দ্বিতীয় খলিফা উমর (রা.) তার শাসনকালে বিভিন্ন অঞ্চলের গভর্নরদের কাছে একটি জরুরি পত্র লেখেন। সেই পত্রে লেখেন, ‘আমার কাছে তোমাদের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ কাজ হলো নামাজ। যে নামাজের হেফাজত করল এবং নামাজের প্রতি যত্নবান হলো, সে ইসলাম হেফাজত করল। আর যে নামাজকে নষ্ট করল, সে অন্যান্য বিধান আরও বেশি পরিমাণে নষ্ট করবে।’ (মুয়াত্তা মালিক, হাদিস : ৬)

নামাজে অবহেলাকারী লোকদের নিন্দা করে কোরআন মাজিদে আল্লাহতায়ালা ইরশাদ করেন, ‘অতএব দুর্যোগ সেসব নামাজির, যারা তাদের নামাজকে ভুলে থাকে।’ (সুরা মাউন, আয়াত : ৪-৫)।

Ad

Follow for More!