ঝিমাই পান পুঞ্জির জুমে গাছ কাটার পাঁয়তারা বন্ধ ও ভূমির মালিকানা রক্ষার্থে সংবাদ সম্মেলন।

প্রকাশিত: ৩:০০ অপরাহ্ণ, জানুয়ারি ২৬, ২০২৩

ঝিমাই পান পুঞ্জির জুমে গাছ কাটার পাঁয়তারা বন্ধ ও ভূমির মালিকানা রক্ষার্থে সংবাদ সম্মেলন।
booked.net

Manual4 Ad Code

নিজস্ব প্রতিনিধি:- কুলাউড়া উপজেলার ঝিমাই পান পুঞ্জির গাছ কাটার পাঁয়তারা বন্ধ, বিভিন্ন পুঞ্জির পানজুম, পরিবেশ-প্রাণ-প্রকৃতি, আদিবাসীদের জীবন-জীবিকা ও ভূমির মালিকানা রক্ষার্থে সংবাদ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়েছে। বৃহস্পতিবার (২৬ জানুয়ারি) দুপুর ১২টায় মৌলভীবাজার প্রেসক্লাবে এই সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করে বৃহত্তর সিলেট আদিবাসী অধিকার সুরক্ষা নাগরিক কমিটি ও কুবরাজ আন্তঃপুঞ্জি উন্নয়ন সংগঠন। সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন কুবরাজ আন্তঃপুঞ্জি উন্নয়ন সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক ও কুলাউড়ার মুরইছড়া পুঞ্জির মন্ত্রী ফ্লোরা বাবলী তালাং।

লিখিত বক্তব্যে তিনি বলেন, কুলাউড়ার ঝিমাই পুঞ্জির সাথে ঝিমাই চা বাগানের (কেদারপুর টি কোম্পানী লিঃ) চলমান ভূমি বিরোধ, ঝিমাই চা বাগান কর্তৃক পুঞ্জির পানজুমের আওতাধীন প্রায় দুই সহস্রাধিক প্রাকৃতিক গাছ কাটার চেষ্টা করা হচ্ছে। পুঞ্জির বসবাসরত আদিবাসীদের বসতভিটা, বিদ্যালয়, গীর্জা, কবরস্থানসহ তাদের জীবন-জীবিকা বিপন্ন হচ্ছে। এতে জলবায়ু পরিবর্তনের জটিল প্রেক্ষাপটে পরিবেশ বিপর্যয়ের আশঙ্কা রয়েছে।

লিখিত বক্তব্যে বলা হয়, একশ’ বছরেরও বেশী সময় ধরে ওই পুঞ্জিতে আদিবাসীরা বসবাস করে আসছেন। গত ২০০৮ সালে প্রথম ঝিমাই চা বাগান কর্তৃপক্ষ ঝিমাই পুঞ্জির দখলীয় ভূমির একাংশ নিজেদের লিজভূক্ত দাবী করে জুমের আওতাভূক্ত প্রাকৃতিক দুই সহস্রাধিক গাছ কাটার পাঁয়তারা শুরু করেন। ২০১১ সালে আদিবাসীরা ঝিমাই পুঞ্জির ভোগদখলীয় ভূমিতে স্বত্ত্ব দাবী করে মৌলভীবাজার যুগ্ম জেলা ও দায়রা জজ ১ম আদালতে স্বত্ত্ব মামলা করেন। মামলা সত্বেও চা বাগান কর্তৃপক্ষের আবেদনের প্রেক্ষিতে ২০১৪ সালের ২২ ডিসেম্বর বিভাগীয় বন কর্মকর্তা শুধুমাত্র চা বাগান কর্তৃক রোপিত গাছের মার্কিং, সংখ্যা ও গাছের প্রকার সংক্রান্ত প্রতিবেদনের জন্য সহকারী বন সংরক্ষক বরবর নির্দেশ প্রদান করেন।

Manual3 Ad Code

পরবর্তীতে ২০১৫ সালের ১৭ ফেব্রুয়ারি (পত্র নং ২২.০১.০০০০.৬৭২.০০৮.০৯৮.১৪১০০৫ মূলে) বিরোধপূর্ণ ভূমি ও পুঞ্জির কোন প্রকার মার্কিং না করার জন্য নির্দেশ প্রদান করা হয়। তা সত্বেও বাগান কর্তৃপক্ষ জোরপূর্বক পুঞ্জিতে প্রবেশ করে গাছ মার্কিং শুরু করেন। এর প্রেক্ষিতে ওই পুঞ্জির মন্ত্রী রানা সুরং হাইকোর্টে রিট আবেদন করেন। যা বর্তমানে সুপ্রিমকোর্টের আপিল বিভাগে রিভিউ ৪০০/২০১৯ হিসেবে চলমান রয়েছে। এরপরও চা বাগান কর্তৃপক্ষ ঝিমাই পুঞ্জির পানজুমের আওতাধীন দুই সহস্রাধিক প্রাকৃতিক গাছ কর্তনের চেষ্টা করছেন।লিখিত বক্তব্যে বলা হয়, বাগান কর্তৃপক্ষ তাদের সেকশনের গাছ বিধি মোতাবেক কাটতে পারেন কিন্তু পুঞ্জির পানহজুমের প্রাকৃতিক গাছ কোনভাবেই না কাটা যাবেনা। এ বিষয়ে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কাছে জোরালো দাবী জানানো হয়।

লিখিত বক্তব্যে আরো বলা হয়, জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ১৯৭২ সালে আইএলও কনভেনশন ১০৭ অনুস্বাক্ষর করেন। যেখানে জাতিসংঘ দ্বারা আদিবাসীদের প্রথাগত ও ঐতিহ্যগত ভূমি অধিকার স্বীকৃত হয়েছে। তা স্বত্ত্বেও গত ৫০ বছরে এতদঞ্চলের আদিবাসীদের ভূমির মালিকানা স্বীকৃত না হওয়ায় বনবিভাগ ও প্রভাবশালীদের দ্বারা আদিবাসীরা উচ্ছেদ, হামলা, মামলা ও হয়রানির শিকার হচ্ছেন। অথচ প্রাকৃতিক এই বনাঞ্চলে আদিবাসীরা প্রকৃতি ও পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষা করে স্থানীয় অর্থনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখে আসছেন।

এছাড়াও সংবাদ সম্মেলনে ঝিমাই পুঞ্জির পানজুমের প্রাকৃতিক গাছ কাটা বন্ধ করা, পুঞ্জিবাসীর যাতায়াতের রাস্তায় বাগান কর্তৃপক্ষের সকল বাধা অপসারণ, ডলুছড়া, বেলকুমা ও নুনছড়াসহ বিভিন্ন পুঞ্জির আদিবাসীদের উপর হয়রানিমূলক মিথ্যা মামলা প্রত্যাহারের দাবী জানানো হয়। সামাজিক বনায়নের আড়ালে প্রভাবশালী ভূমিখেকোদের আশ্রয়-প্রশ্রয় বন্ধ করার পাশাপাশি তাদের ভোগ দখলীয় ভূমিতে কোন প্রকার সামাজিক বনায়ন প্রকল্প গ্রহণ না করার দাবী জানানো হয়। তাছাড়া পানচাষের একমাত্র অবলম্বন প্রাকৃতিক গাছ কেটে আদিবাসীদের উচ্ছেদের ষড়যন্ত্র বন্ধ করাসহ অন্যান্য দাবীও জানানো হয়।

Manual7 Ad Code

সংবাদ সম্মেলনে অন্যদের মাঝে বৃহত্তর সিলেট আদিবাসী অধিকার সুরক্ষা নাগরিক কমিটির সভাপতি ডাডলী ডেরিক পেন্টিস, সাধারণ সম্পাদক মো. আবুল হাসান ও বৃহত্তর সিলেট ত্রিপুরা উন্নয়ন পরিষদের সভাপতি জনক দেববর্মা সহ বিভিন্ন পর্যায়ের নেতৃবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন।

ছবিঃ- সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য পাঠ করছেন কুবরাজ আন্তঃপুঞ্জি উন্নয়ন সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক ফ্লোরা বাবলী তালাং।

Manual3 Ad Code

 

Manual5 Ad Code

এ সংক্রান্ত আরও সংবাদ

Ad

Follow for More!