গুজব ছড়ানো মুনাফেকের কাজ।

প্রকাশিত: ৮:০৮ পূর্বাহ্ণ, জুন ২, ২০২৩

গুজব ছড়ানো মুনাফেকের কাজ।
booked.net

ইসলামে গুজবের কোনো স্থান নেই এবং এ বিষয়টি ইসলামে খুবই গর্হিত কাজ হিসাবে চিহ্নিত। আল্লাহতায়ালা ভিত্তিহীন খবর প্রচারকারীদের কথা শুনেই বিশ্বাস না করে সত্যতা যাচাই করার নির্দেশ দিয়ে বলেছেন,‘হে ইমানদাররা! তোমাদের যখন কোনো ফাসেক লোক কোনো খবর দিয়ে আসে, তার সত্যতা যাচাই করে নিও, যেন অজ্ঞাতসারে তোমরা কোনো জাতির ক্ষতি করে না বস, যার ফলে তোমাদের কৃতকর্মের জন্য অনুতপ্ত হতে হয়’ (সূরা হুজুরাত : ৬)।

যারা মদিনার সমাজে মিথ্যা গুজব ছড়িয়ে আতঙ্ক সৃষ্টি করছিল, তা বন্ধ না করলে তাদের কঠিন শাস্তি প্রদানের ঘোষণা প্রদান করে আল্লাহতায়ালা বলেন, ‘মুনাফিকরা ও যাদের অন্তরে ব্যাধি আছে এবং যারা মদিনায় মিথ্যা গুজব ছড়িয়ে বেড়ায় তারা বিরত না হলে আমি অবশ্যই তোমাকে তাদের বিরুদ্ধে দাঁড় করাব। এরপর তারা এ (শহরে) তোমার প্রতিবেশী হিসাবে অতি অল্পকালই থাকতে পারবে। তাদের যেখানেই পাওয়া যায় তাদের ধরা হোক এবং নির্মমভাবে হত্যা করা হোক। কারণ তারা অভিশপ্ত’ (সূরা আহজাব : ৬০-৬১)।

একটি মিথ্যা অপপ্রচার বা গুজব কত সহজেই যে জনগণের কোনো কোনো অংশকে উত্তেজিত করে ভয়ংকর কাণ্ড তথা লুটপাট, ভাংচুর ও অগ্নিসংযোগ ঘটিয়ে দেশে সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা লাগাতে পারে তার অসংখ্য দৃষ্টান্তও আমাদের দেশে রয়েছে। যেমন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ধর্ম অবমাননার গুজব ছড়িয়ে ২০১২ সালের ২৯ সেপ্টেম্বর রাতে কক্সবাজার জেলার রামুতে হামলা চালিয়ে লুটপাটসহ ১২টি বৌদ্ধমন্দির ও ৩০টি বাড়িতে আগুন দেওয়া হয়।

২০১৬ সালে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নাসিরনগরে রসরাজ নামে এক মৎস্যজীবীর বিরুদ্ধে একই অভিযোগ এনে লোকজনকে খেপিয়ে তুলে ঘরবাড়ি ও মন্দিরে হামলা চালানো হয়। এ ছাড়া পদ্মা সেতুতে মাথা লাগা বা ছেলেধরার গুজব ছড়িয়ে কয়েকজনের প্রাণনাশ ঘটেছে। অতিসম্প্রতি পঞ্চগড়ে আহমদিয়া সম্প্রদায়ের বিরুদ্ধে গুজব ছড়িয়ে তাদের বাড়িঘরে অগ্নিসংযোগ করা হয়েছে। একটি মিথ্যা ও গুজব খুব সহজেই শান্তিময় সমাজকে ধ্বংস করে দিতে পারে।

পবিত্র কুরআন ও হাদিসে গুজব তথা মিথ্যা অপপ্রচারের ব্যাপারে স্পষ্ট দিকনির্দেশনা রয়েছে। গুজব ছড়ানো ইসলামে শাস্তিযোগ্য অপরাধ। গুজব ছড়িয়ে যারা মানুষের নিরাপত্তা বিঘ্নিত করে এবং সম্মানহানি করে তাদের জন্য দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির বিধানও রয়েছে ইসলামে। বেশ কিছু নির্দেশনার আলোকে গুজব বিষয়টি ইসলামে নিষিদ্ধ। কেননা গুজব মিথ্যা আর মিথ্যা বলা হারাম। নবি করিম (সা.) ইরশাদ করেছেন, ‘মুনাফিকের অন্যতম আলামত হলো যখন সে কথা বলে তখন মিথ্যা কথা বলে’ (বোখারি)।

বর্তমানে আমরা দেখতে পাই সোশ্যাল মিডিয়ায় কেউ কোনো কিছু পোস্ট করল আর তার সত্যতা যাচাই না করেই সঙ্গে সঙ্গে হাজার হাজার শেয়ার আর লাখ লাখ লাইক হয়ে তা ভাইরালও হয়ে যায়। এর ফলে দেশে যে কী ধরনের ক্ষতি হতে পারে তা আমরা একবারের জন্যও চিন্তা করি না। আসলে বিভিন্ন মিথ্যা সংবাদ ও গুজব ছড়িয়ে দেশের আইনশৃঙ্খলা নষ্ট করা মারাত্মক অপরাধ আর এসব শয়তানের কাজ। যারা গুজব ছড়ায় তাদের বিরুদ্ধে আমাদের সবাইকে ঐক্যবদ্ধ হয়ে প্রতিহত করতে হবে।

Ad

Follow for More!