কুলাউড়া-শাহবাজপুর রেলপথ প্রকল্পের চুক্তি বাতিলের সিদ্ধান্তের আগে কাজ শুরু করেছে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান।

প্রকাশিত: ৩:২৯ অপরাহ্ণ, ফেব্রুয়ারি ৮, ২০২২

কুলাউড়া-শাহবাজপুর রেলপথ প্রকল্পের চুক্তি বাতিলের সিদ্ধান্তের আগে কাজ শুরু করেছে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান।
booked.net
Manual3 Ad Code

স্বপন কুমার  দেব রতনঃ- ‘কুলাউড়া-শাহবাজপুর রেলপথ’ পুনর্বাসন প্রকল্প বাস্তবায়নের কাজ পায় ভারতীয় ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান ‘কালিন্দ রেল নির্মাণ’। ৬৭৮ কোটি ৫০ লাখ ৭৯ হাজার টাকা ব্যয়ের ২০২০ সালের ডিসেম্বরে প্রকল্প বাস্তবায়নের চুক্তি স্বাক্ষর করলেও নির্ধারিত মেয়াদের এক বছর পরও ২৫ ভাগ কাজ সম্পন্ন করেনি সংশ্লিষ্ট ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানটি।
কাজের ধীর গতি, গাফিলতি আর দীর্ঘ সময় ধরে কাজ বন্ধ রাখায় রেলমন্ত্রণালয় যখন চুক্তি বাতিলের চুড়ান্ত সিদ্ধান্ত নিতে যাচ্ছে, ঠিক তখনই সংস্কার কাজে তৎপর হয়ে উঠেছে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানটি।

ব্রিটিশ আমল থেকে ভারতের আসাম রাজ্যের সাথে যুক্ত থাকা প্রায় ৫৩ কিলোমিটার দীর্ঘ ‘কুলাউড়া-শাহবাজপুর’ রেলপথটি এ অঞ্চলের সাধারণ মানুষের যাতায়াতের অন্যতম ভরসাস্থল ছিল । কিন্তু ঘনঘন দুর্ঘটনা ও অব্যবস্থাপনার কারণে ২০০২ সালে এ গুরুত্বপূর্ণ রেলপথটিতে ট্রেন চলাচল বন্ধ করে দেওয়া হয়।

Manual3 Ad Code

এ রেলপথের ছয়টি স্টেশন দীর্ঘদিন বন্ধ থাকার পর ২০১৫ সালের ২৬ মে জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) সভায় ৬৭৮ কোটি ৫০ লাখ ৭৯ হাজার টাকা ব্যয়ে কুলাউড়া-শাহবাজপুর রেলপথ পুনঃস্থাপন প্রকল্প অনুমোদন পায়। এর মধ্যে বাংলাদেশ সরকার ১২২ কোটি ৫২ লাখ টাকা এবং ভারত সরকার ৫৫৫ কোটি ৯৯ লাখ টাকা দেবে। ৪৪ দশমিক ৭৭ কিলোমিটারের পুরোটাই ডুয়েলগেজ লাইন করা হবে। এরমধ্যে ৭ দশমিক ৭৭ কিলোমিটার লুপ লাইনের কাজ হবে। ওই বছরের ৬ জুন ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির বাংলাদেশ সফরকালে প্রকল্পটির আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন হয়।

প্রকল্প বাস্তবায়নের দায়িত্ব পেয়ে ভারতীয় ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান কালিন্দি রেল নির্মাণ ২০১৮ সালের মে মাসে পুনর্বাসন প্রকল্পের কাজ শুরু করে। চুক্তি অনুযায়ী ২০২০ সালের মে মাসে কাজ শেষ করার কথা। কিন্তু কাজের ধীরগতি আর নানা গাফিলতিতে এ সময়ে প্রতিষ্ঠানটি কাজ সম্পন্ন করে মাত্র ১৪-১৫ ভাগ। গত অক্টোবরে নতুন করে প্রকল্পের মেয়াদ বাড়ানো হয় আরও ছয়মাস।

Manual2 Ad Code

রেলওয়ে সূত্র জানায়, গত বছরের ২৭ অক্টোবর বাংলাদেশ ও ভারতের দ্বিপাক্ষিক বৈঠকে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান কাজ বন্ধ রাখায় এ প্রকল্পের বাস্তবায়ন নিয়ে অসন্তোষ প্রকাশ করে দ্রুত কাজ শুরুর তাগিদ দেওয়া হয়। এতেও দৃশ্যমান কাজ না হওয়ায় ৯ নভেম্বর ভারতীয় এক্সিম ব্যাংকের ঢাকা অফিসে ভারতীয় হাইকমিশনের রেলওয়ে উপদেষ্টা ও ঠিকাদারের উপস্থিতিতে বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। ১৮ নভেম্বর কাজ চলমান না থাকায় ঠিকাদারের বিরুদ্ধে কেন ব্যবস্থা নেওয়া হবে না, তা জানতে চিঠি দেওয়া হয়। চিঠির জবাবে অভিযুক্ত ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানটি করোনার অজুহাতসহ নানা বাহানা তুলে ধরে। এতকিছুর পরও কাজ শুরু না করায় ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে চুক্তি বাতিলের মত কঠোর ব্যবস্থা নেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে বাংলাদেশ রেলওয়ে।

সম্প্রতি রেললাইনের বড়লেখা উপজেলার কাঠালতলী এলাকায় একটি ব্রিজের অসমাপ্ত নির্মাণ কাজসহ বিভিন্ন স্থানে কাজ চলতে দেখা গেছে। স্থানীয় এলাকাবাসী জানান, প্রায় ৬-৮ মাস ধরে কোন কাজ চলতে দেখেননি। গত ৬-৭দিন ধরে রেললাইনের কাজ পূণরায় শুরু হয়েছে।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে রেলওয়ের উর্ধতন কর্মকর্তারা বলেন, বারবার কাজ শুরুর জন্য ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান কালিন্দি রেল নির্মাণকে নির্দেশনা দেয়া হলেও তারা গুরুত্বই দিচ্ছে না। ফলে এ প্রকল্প বাস্তবায়নে অনিশ্চয়তা দেখা দিয়েছে। এরপরিপ্রেক্ষিতে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের সাথে করা নির্মাণ চুক্তি বাতিলের বিষয়ে এরই মধ্যে বাংলাদেশ রেলওয়ে, ইআরডি এবং এক্সিম ব্যাংক অব ইন্ডিয়া একমত পোষণ করেছে। সর্বশেষ চলতি বছরের গত ১ ফেব্রুয়ারি অনুষ্ঠিত ‘বাংলাদেশ রেলওয়ের কুলাউড়া-শাহবাজপুর সেকশন পুনর্বাসন’ প্রকল্পের প্রজেক্ট স্টিয়ারিং কমিটির (পিএসসি) সভায় এ বিষয়ে চুড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেওয়ার জন্য একটি ত্রিপক্ষীয় সভা আহ্বান করা হয়েছে।

Manual7 Ad Code

কুলাউড়া-শাহবাজপুর প্রকল্পের বিষয়ে রেলপথমন্ত্রী নূরুল ইসলাম সুজন সাংবাদিকদের মুঠোফোনে জানান, এ প্রকল্পের ভারতীয় ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হবে। গুরুত্ব সহকারে প্রকল্পটি দ্রুত শেষ করার প্রয়োজনীয় সবধরণের ব্যবস্থা নেওয়া হবে। ভারতীয় রেল নির্মাণ কোম্পানী ‘কালিন্দি রেল নির্মাণ’ কোম্পানীর চিফ প্রজেক্ট ম্যানেজার জোবায়ের আহমদ বলেন, করোনা সংক্রমণের কারণে গত ৭ থেকে ৮ মাস কাজ বন্ধ থাকার পর চলিত বছরের ৬ জানুয়ারী থেকে পুনরায় কাজ শুরু হয়েছে।

ছবিঃ- ইন্টারনেট।

Manual5 Ad Code

Ad

Follow for More!