প্রকাশিত: ৫:৩৮ অপরাহ্ণ, সেপ্টেম্বর ২৫, ২০২২
স্বপন কুমার দেব রতনঃ- কুলাউড়া উপজেলার কাদিপুর ইউনিয়নের শিববাড়ি মন্দিরটি অপরুপ দৃষ্টিনন্দন স্থাপত্যশিল্পের জন্য বৃহত্তর সিলেট সহ সারাদেশের হিন্দু ভক্তদের কাছে আকর্ষণীয় মন্দির। অপূর্ব কারুকার্য খচিত মন্দিরটি কাদিপুর শিববাড়ি নামে বেশি পরিচিত। এবছর শিববাড়িতে পাথরের তৈরি সহস্রভোজা (এক হাজার হাতের) দুর্গা প্রতিমার পূজা হবে।
তবে শারদীয় এই উৎসবে মূল পূজা হবে রক্তবর্ণের দশহাতের স্থায়ী প্রতিমাতেই একথা জানান মন্দিরের প্রধান পুরোহিত শ্রী কাজল ভট্টাচার্য। আর বসন্তকালে বাসন্তী পূজা হতে পারে হাজার হাতের প্রতিমাতে। পুরোহিত বলেন ‘আনন্দ ধাম’ মন্দিরের নতুন হাজার হাতের প্রতিমাতে এবারের পূজাতে গন্ধপুস্প দেয়া হবে।
এই মন্দির পূণ্যার্থীদের কাছে একটি দর্শনীয়স্থান হিসেবে ব্যাপক পরিচিত। দুর্গাপূজার সময় দেশের নানা প্রান্ত থেকে আসেন হাজার হাজার দর্শনার্থী। মন্দিরের প্রধান পুজারি আচার্য্য পুলক সোম জানান, বেশকয়েক বৎসর পূর্বে স্বপ্নাদৃষ্টে পাওয়া সহস্রভুজা (এক হাজার হাত) দুর্গা প্রতিমা নির্মাণ শুরু হয়েছিল ২০১৮ সালে। কিন্তু বিগত সময়ে করোনাকালে কাজে বিলম্ব হয়। দীর্ঘ ৪ বৎসর ব্যাপী এই কাজে ২০ জন নির্মাণ শিল্পী গত মাসে প্রতিমার কাজ শেষ করেন। প্রতিমাটি নির্মাণে পাথর, সিমেন্ট, রড ও বালু ব্যবহৃত করা হয়েছে। প্রায় ২৩ফুট উঁচু তপ্তকাঞ্চন বর্ণের সহস্রভুজা প্রতিমায় এখন রঙের কাজ চলছে।
স্থানীয় লোকজন জানান, এই বাড়ির স্বর্গীয় অনঙ্গ কুমার সোম ছিলেন জমিদার বংশের। এই বংশের কোন এক বংশধর তাঁদের দীঘিরপাড়ে বেলগাছের নিচে নিয়মিত শিবের সাধনা করতেন। সাধনা করলেও তখনো এ বাড়িতে কোন শিবলিঙ্গ ছিলনা। তাঁদের কুলদেবতা হচ্ছেন কানাই লাল (রাধাকৃষ্ণ)। পূর্বপুরুষগণ সম্পত্তির অনেকটা দেবত্বোর করে দিয়েছিলেন কুলদেবতার নামে।
পরে অনঙ্গ কুমার সোমের পুত্র স্বর্গীয় অজিত কুমার সোমের পরবর্তী বংশধর পুলক সোমের সাধনায় ১৪০৫ বঙ্গাব্দে (১৯৯৮ খ্রিঃ) শ্রাবণের ১৮ তারিখ শিবলিঙ্গটি পাওয়া যায়। ধারণা করা হয় সেই শিবলিঙ্গটি ১৫০ বছর পূর্বেকার। পরে পুরনো মন্দিরটি সংস্কার করে সেখানেই শিবলিঙ্গটি স্থাপন করা হয়। শুরু হয় প্রতি সোমবারে সোমনাথ (শিব) পূজা। আসতে শুরু করেন ভক্তগণ। নিজেদের প্রার্থনা জানিয়ে শিবের পূজা শুরু হলে মন্দিরের উন্নয়নও শুরু হয় ভক্তদের আর্থিক সহায়তায়। তৈরি হয় অপূর্ব কারুকার্যমন্ডিত মন্দির। যা ভক্তদেরকে আকৃষ্ট করে। ছুটে আসেন দেশবিদেশের হাজারও ভক্ত।
জানা যায়, শিববাড়ির পূর্বপুরুষদের জমিদারী প্রথার বিলুপ্তি ঘটলে একসময়ের দোর্দন্ড প্রতাপশালী জমিদার পরিবার চরম আর্থিক সংকটে পরে। ফলে প্রায় ৩১ বৎসর দেবী দুর্গার ঘটপুজা তারা করেন। তখন সেই বনেদী পূজা-পার্বণে আকাশছোঁয়া জৌলুস হারিয়ে গেলেও তাদের ধর্মীয় বিশ্বাসে একবিন্দু ঘাটতি পড়েনি। পরবর্তীতে ২০০১ সালে জমিদারী বাড়ির মন্দিরটি জৌলুস ফিরতে শুরু করে, যা এখনও চলছে।প্রতিবছর দুর্গা পূজায় লাখো ভক্তদের ভিড়ে মুখর হয়ে উঠে অনিন্দ্যসুন্দর এ মন্দিরটি।
জেলার রাজনগরের পাঁচগাও দুর্গা মন্দিরের (রক্তবর্ণা) প্রতিমার পূজায় দেশবিদেশে লাখ ভক্ত দর্শনার্থী সুদীর্ঘকাল থেকে যেভাবে আসতেন নিজেদের মনোবাসনা পূর্ণ হওয়ায় পূজা দিতে, তেমনি কাদিপুর শিববাড়িতে আসতে থাকেন লাখ ভক্ত। ফলে দুর্গাপূজার চারদিন জেলা ও উপজেলা প্রশাসনকে এই দুটি মন্দিরের জন্য বাড়তি নিরাপত্তার ব্যবস্থা নিতে হয়। যাতে লাখো ভক্ত নির্বিঘ্নে পূজা ও দর্শন করে পূণ্যলাভ করতে পারেন।
PUBLISHED FROM
2152-B WESTCHESTER AVE BRONX
NEW YORK 10462 USA
Email : voiceofkulaura2@gmail.com
Chief Editor : Shafiq Chowdhury
Editor : Abdul Quayyum Mintu
Managing Editor : Nurul Islam Emon
Design and developed by positiveit.us