কুলাউড়া উপজেলা পরিষদ নির্বাচন। প্রার্থী নিয়ে বিপাকে আওয়ামী লীগ।

প্রকাশিত: ৬:২৫ অপরাহ্ণ, মে ১, ২০২৪

কুলাউড়া উপজেলা পরিষদ নির্বাচন। প্রার্থী নিয়ে বিপাকে আওয়ামী লীগ।
booked.net

Manual3 Ad Code

 

নিজস্ব প্রতিবেদক:- কুলাউড়া উপজেলায় প্রথমধাপে অনুষ্ঠিত নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন উপজেলা আওয়ামী লীগের ৩ শীর্ষ নেতা সহ ৪ জন প্রার্থী। ভাইস চেয়ারম্যান পদে ৫ জন এবং সংরক্ষিত আসনে মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান পদে ২ জন প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। তবে প্রার্থী নিয়ে বিপাকে পড়েছেন ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীরা। এক্ষেত্রে কর্মীদের মতামত ভিন্ন। তাদের মতে, এবার মাঠের কর্মীদের মূল্যায়ন হবে এবং নেতাদেরও জনপ্রিয়তা যাচাই হবে। এদিকে আওয়ামী লীগের শীর্ষ ৩ নেতা প্রার্থী হওয়ায় জনমনেও তীব্র প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি হয়েছে।

Manual4 Ad Code

 

কুলাউড়া উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও বর্ষীয়ান নেতা রফিকুল ইসলাম রেনু। তিনি এবার নির্বাচনে আনারস প্রতীক নিয়ে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। তিনি ভুকশিমইল ইউনিয়নের ৩ বারের সাবেক চেয়ারম্যান। দলের সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করেছেন ২ যুগেরও বেশি। নির্বাচন করতে তিনি উপজেলা এবং ইউনিয়ন পর্যায়ে সভা করে সর্বস্তরের নেতাকর্মীদের মতামত নিয়েই তিনি প্রার্থী হয়েছেন। তার অনুসারী নেতাকর্মীরা আনারস প্রতীকে জয়ের ব্যাপারে আশাবাদী।

 

কেউ কেউ মনে করছেন দলের নেতাকর্মীরা যদি তার সাথে প্রতিশ্রুতি ভঙ্গ না করেন তাহলে তিনিই হবেন শক্ত প্রতিপক্ষ। এ ব্যাপারে রফিকুল ইসলাম রেনু বলেন, আমি দলের সকল পর্যায়ে নেতাকর্মীদের মতামত নিয়ে প্রার্থী হয়েছি। এটাই আমার জীবনের শেষ নির্বাচন। আমি দীর্ঘ ৫০ বছরের রাজনীতিতে কখনও কোন জাতীয় কিংবা উপজেলা পর্যায়ে নির্বাচনে অংশগ্রহণ করিনি। দীর্ঘদিন রাজনীতি করেছি। সবাইকে নির্বাচনে সাহায্য করেছি। নিজের ভাগ্যকে একবার পরীক্ষা করতে চাই। দলের সকল পর্যায়ের নেতাকর্মীদের মতামত যাচাই করে প্রার্থী হয়েছি। দলমত নির্বিশেষে সবার সমর্থন করেছেন। দলের অন্যান্য প্রার্থীদেরও তিনি বলেছেন, তাকে এবার সুযোগ দেয়ার জন্য। যেহেতু জীবনের শেষ নির্বাচন তাই সবার কাছে অনুরোধ, শেষবারের মতো সেবা করার সুযোগ দিন। দলমত নির্বিশেষে সবার কাছে এটাই আমার চাওয়া।

 

Manual1 Ad Code

কুলাউড়া উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান ও ভাইস চেয়ারম্যান আ স ম কামরুল ইসলাম। এবারের  নির্বাচনে কাপ পিরিছ নিয়ে তিনি  প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। রাজনীতিক পরিবারের মানুষ বলেই সর্বস্তরের মানুষের কাছে তার রয়েছে জনপ্রিয়তা। বাবা সাবেক এমপি, উপজেলা চেয়ারম্যান মরহুম আব্দুল জব্বার ছিলেন সর্বজন শ্রদ্ধেয়। ছাত্রলীগের রাজনীতি থেকে উঠে আসা এই নেতার রয়েছে সর্বদলীয় গ্রহণযোগ্যতা। দলের একাধিক প্রার্থী প্রসঙ্গে তিনি বলেন, এটা দলীয় নির্বাচন নয়। দলীয় প্রতীক’ও নেই। নেত্রী সবার জন্য ওপেন করে দিয়েছেন। সকলের অংশগ্রহণে প্রতিদ্বন্দ্বিতা নির্বাচন ও জনগণের মতামত প্রতিফলিত হবে। প্রার্থী হওয়ার ক্ষেত্রে দলের কোন বাধ্যবাধকতা নেই। জনগণ যাকে খুশি নির্বাচিত করবে। দলের নেতাকর্মীরা তার সঙ্গে রয়েছেন। নেতাকর্মীদেরও কোনরূপ চাপ সৃষ্টির সুযোগ নেই।

 

আরেক প্রার্থী কুলাউড়া উপজেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি কামাল হাসান। তিনি এবারের উপজেলা নির্বাচনে মোটরসাইকেল নিয়ে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। সাংবাদিক হিসেবে এলাকায় তার বেশ পরিচিত। একসময়ে ছিলেন বাংলাবাজার পত্রিকার কুটনীতিক রিপোর্টার। এলাকায় বিভিন্ন সামাজিক সাংস্কৃতিক কর্মাকান্ড পরিচালনা করে মানুষের আস্থা অর্জন করেছেন। জাতীয় সংসদ নির্বাচন করতে একাধিকবার দলীয় মনোনয়ন সংগ্রহ করেছিলেন। তিনি বলেন, দলীয় প্রতিক না থাকায় স্থানীয় সরকার নির্বাচন তথা স্থানীয় সরকার ব্যবস্থা শক্তিশালী হবে। এই নির্বাচনে তাদের পছন্দের প্রার্থীকে নির্বাচিত করবে। দলের অপর দু’প্রার্থী রয়েছেন। মানুষ যাকে যোগ্য মনে করবে তাকে নির্বাচিত করবে। দলীয় প্রতিক ছাড়া নির্বাচন দেয়ায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে ধন্যবাদ জানাই। দলের ৩ প্রার্থী বিরুদ্ধে একক প্রার্থী সুবিধা পাবে কিনা? এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, চেয়ারম্যান পদে যে ৪ জন নির্বাচনে অংশ নিচ্ছেন সবাই শক্তিশালী প্রার্থী। দলীয় প্রতীক নেই। নির্বাচনেও দলীয় কোন প্রভাব থাকবে না। দল থেকে কোন চাপও নেই। তিনি প্রতীক তুলে স্থানীয় সরকার নির্বাচন করায় প্রধানমন্ত্রীর প্রতি কৃতজ্ঞতা জানিয়েছেন।

 

এদিকে মাঠে আওয়ামী লীগের ৩ নেতার ত্রিধাবিভক্তির সুযোগ নিতে চান আওয়ামী বিরোধী একমাত্র প্রার্থী আল ইসলাহ’র প্রার্থী সাবেক ২ বারের উপজেলা ভাইস চেয়ারম্যান মাওলানা ফজলুল হক খান সাহেদ। আর ইসলাহ’র কুলাউড়া উপজেলায় একটা শক্তিশালী কর্মী সমর্থক রয়েছে। তাদেরকে কাজে লাগিয়ে জামায়াত বিএনপি’র ভোটেও ভাগ বসাতে চান।

 

উল্লেখ্য, ১৩টি ইউনিয়ন ও একটি পৌরসভা নিয়ে ২ লাখ ৯০ হাজার ৬৪৮ ভোটার অধ্যুষিত কুলাউড়া উপজেলায় মোট ১০৩টি ভোট কেন্দ্রে গ্রহণ করা হবে ভোট। উপজেলা ভাইস চেয়ারম্যান পদে উপজেলা যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক মো. মইনুল ইসলাম, পুরান উরাং, রাজ কুমার কালোয়ার, মো. সাইফুল ইসলাম কুতুব ও মো. আফজাল হোসেন। সংরক্ষিত নারী আসনে উপজেলা ভাইস চেয়ারম্যান পদে বর্তমান ভাইস চেয়ারম্যান ফাতেহা ফেরদৌস পপি ও সাবেক ভাইস চেয়ারম্যান নেহার বেগম মনোনয়ন জমা দেন।

 

Manual2 Ad Code

এদিকে নির্বাচন কমিশনে দেওয়া হলফনামায় দেওয়া তথ্যানুযায়ী, আওয়ামী লীগের ৩ নেতার মধ্যে সম্পদ বেশি কামাল হাসানের। আর সবচেয়ে কম সম্পদ রফিকুল ইসলাম রেনুর। কামাল হাসানের ব্যাংকে জমা আছে ৭২ লাখ টাকা। রেনুর ব্যাংকে জমা আছে ৫ লাখ ৯৮ হাজার টাকা। আর কামরুল ইসলামের ব্যাংকে জমা আছে ১০ লাখ ৪৮ হাজার টাকা।

 

রফিকুল ইসলাম রেনু নির্বাচনী হলফনামায় শিক্ষাগত যোগ্যতা দেওয়া হয়েছে মাধ্যমিক পাস। তার পেশা কৃষি। তার বছরে আয় কৃষি খাতে ১ লাখ ৫০ হাজার ও অন্যান্য খাতে ৫০ হাজার টকা। রেনুর ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানে জমা আছে ৫ লাখ ৯৮ হাজার টাকা। এ ছাড়া নিজ নামে ৫ লাখ টাকা মূল্যের একটি নোহা গাড়ি আছে। এ ছাড়া কৃষিজমি ৮৯ শতক, অকৃষি জমি ১৫.৫০ শতক এবং বাড়ির জমি ৬.৫০ শতক রয়েছে। তিনি দানসূত্রে ৮০ হাজার টাকা ও ১ লাখ টাকার ইলেকট্রনিক সামগ্রীর কথা হলফনামায় উল্লেখ করেছেন।

 

আ স ম কামরুল ইসলামের শিক্ষাগত যোগ্যতা বিএ পাস। তারও পেশা কৃষি। তার বার্ষিক আয় কৃষি খাতে ২১ হাজার ৭৫০ টাকা, বাড়ি ও দোকান ভাড়া থেকে ৭২ হাজার টাকা, অন্যান্য খাতে ২ লাখ ৬১ হাজার ২৫০ টাকা। কামরুলের নিজ নামে ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানে জমা অর্থের পরিমাণ ১০ লাখ ৪৮ হাজার ৫শ টাকা। কৃষি ও অকৃষি সব জমি পৈতৃক সূত্রে পাওয়া। এ ছাড়া ৬৫ হাজার টকার ইলেক্ট্রনিক সামগ্রী ও ৮৫ হাজার টাকার আসবাব পত্র আছে বলে হলফনামায় উল্লেখ করেছেন তিনি।

 

কামাল হাসান স্নাতক (সম্মান) পাস। তার বছরে আয় কৃষি খাতে ২২ লাখ টাকা ও বাড়ি ভাড়া থেকে ৩ লাখ টাকা। কামালের শেয়ার, সঞ্চয়পত্র/ব্যাংক আমানত ১২ লাখ ২৫ হাজার ১৪০ টাকা এবং অন্যান্য ৪৪ হাজার ২৩৫ টাকা। তার হাতে নগদ আছে ২ লাখ টাকা। আর ব্যাংকে জমা ৭২ লাখ ৫শ টাকা। কামালের ১৪ লাখ ২০ হাজার টাকার মোটর গাড়ি, বাস ও ট্রাক আছে। এ ছাড়া ৩ লাখ টাকার স্বর্ণ, ৩ লাখ টাকার ইলেক্ট্রনিক সামগ্রী, ২ লাখ ৫০ হাজার টাকার আসবাবপত্র এবং নিজ নামে ৩.৭৩ বিঘা কৃষিজমি (মূল্য ১৪ লাখ ৪৯ হাজার ৬৬০ টাকা), ৫ শতক অকৃষি (মূল্য ২০ লাখ টাকা) রয়েছে বলে হলফনামায় উল্লেখ রয়েছে।

Manual6 Ad Code

এ সংক্রান্ত আরও সংবাদ

Ad

Follow for More!