প্রকাশিত: ৭:০০ পূর্বাহ্ণ, নভেম্বর ১৯, ২০২১
ইসলামে আমানত রক্ষার প্রতি যেমন গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে, তেমনই যে আমানত রক্ষা করে না, মানুষের সঙ্গে প্রতারণা করে, অপরের হক আত্মসাৎ করে, তার জন্যও ঘোষণা করা হয়েছে মারাত্মক ও কঠিন শাস্তির কথা।
প্রিয় নবী (সা.) ছোটবেলা থেকেই আমানতদার ছিলেন। ইহুদি আর খৃষ্টান নেই, সব মতবাদের লোকেরাই তাকে বিশ্বাস করত এবং তার কাছে অতি মূল্যবান আসবাবপত্র গচ্ছিত রাখত। নবীজির এমন বিশ্বস্ততার কারণেই সবাই তাকে আল আমিন বলে ডাকত। যার অর্থ বিশ্বস্ত ব্যক্তি।
মোমিন বান্দার অন্যতম বৈশিষ্ট্যই হল সে বিশ্বস্ত এবং আমানতদার হবে। এগুণে নবী-রাসুলেরা যেমন গুণান্বিত ছিলেন, তেমনি ছিলেন আখেরি নবীর সাহাবিরাও।
পবিত্র কোরআনে বারবার নির্দেশনা প্রদান করা হয়েছে আমানত রক্ষার প্রতি। আল্লাহ তায়ালা বলেন, তোমরা নিজেদের মধ্যে একে অন্যের অর্থ-সম্পদ অন্যায়ভাবে গ্রাস করো না এবং মানুষের ধন-সম্পদের কিয়দংশ জেনে-শুনে অন্যায়ভাবে গ্রাস করার উদ্দেশ্যে তা বিচারকের কাছে পেশ করো না। (সূরা আল-বাকারা, আয়াত-১৮৮)
আরও বর্ণিত আছে, নিশ্চয়ই আল্লাহ তোমাদের নির্দেশ দিচ্ছেন, তোমরা আমানতকে তার মালিকের কাছে প্রত্যার্পণ করো বা ফেরত দাও। (সূরা আন-নিসা, আয়াত-৫৮)
প্রকৃত ঈমানদার হওয়ার আলামত হল আমানত রক্ষা করা। এ সম্বন্ধে আল্লাহ তায়ালা বলেন, আর (তারাই প্রকৃত মুমিন) যারা আমানত ও প্রতিশ্রুতি রক্ষা করে। (সূরা আল-মুমিনুন, আয়াত-৮)
হজরত আবদুল্লাহ ইবনে আমর (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুল (সা.) বলেছেন, যদি তোমাদের মধ্যে চারটি জিনিস থাকে, তবে পার্থিব কোনো জিনিস হাতছাড়া হয়ে গেলেও তোমরা ক্ষতিগ্রস্ত হবে না। আর সেই চারটি জিনিস হলো- এক. আমানতের হেফাজত করা। দুই. সত্য ভাষণ বা সত্য কথা বলা। তিন. উত্তম চরিত্র। চার. পবিত্র রিজিক বা হালাল উপার্জন। (মুসনাদে আহমদ)
আরেক হাদিসে আছে, যে ব্যক্তি তোমার কাছে আমানত রেখেছে, তার আমানত তাকে ফেরত দাও। আর যে ব্যক্তি তোমার আমানত আত্মসাৎ করে, তুমি তার আমানত আত্মসাৎ করো না। ভেবে দেখা উচিত, এই গুণগুলো আমাদের মধ্যে আছে কি না! দুনিয়ার লোভে পড়ে কোন্ পাপ কাজটি আমরা করি না। মিথ্যা কথা বলা থেকে শুরু করে আমানতের খেয়ানত পর্যন্ত সবই আমরা করে বেড়াই। লোক ঠকাই। মানুষের সঙ্গে প্রতারণা করি। অথচ, আল্লাহর রাসুল (সা.) বলেছেন, যার চরিত্রে আমানতদারী নেই, তার ঈমান নেই। আর যে অঙ্গীকার রক্ষা করে না তার দ্বীন নেই। (মুসনাদে আহমাদ)।
অন্য হাদিসে তিনি বলেছেন, মুনাফিকের লক্ষণ তিনটি- যখন কথা বলে মিথ্যা বলে, যখন ওয়াদা করে তখন তা ভঙ্গ করে আর যখন তার কাছে আমানত রাখা হয় তখন সে তার খেয়ানত করে। (বুখারি, মুসলিম)।
আমানত আত্মসাতকারীর প্রতি কতো কঠিন বাক্য উচ্চারণ হয়েছে। অন্যের হক নষ্ট করলে দুনিয়ায় যেমন লাঞ্চনা ও অপদস্ততা রয়েছে, তেমন আখেরাতেও রয়েছে কঠিন ও ভয়ংকর রকমের শাস্তি।
হজরত ইবনে মাসউদ (রা.) বলেন, কেয়ামতের দিন আমানতের খেয়ানতকারীকে হাজির করে বলা হবে, ‘তোমার কাছে গচ্ছিত আমানত ফিরিয়ে দাও। সে জবাব দেবে, হে আমার প্রভু, কীভাবে তা ফিরিয়ে দেব? পৃথিবী তো ধ্বংস হয়ে গেছে। তখন তার কাছে গচ্ছিত রাখা জিনিসটি যেভাবে রাখা হয়েছিল ঠিক অনুরূপভাবে জাহান্নামের সবচেয়ে নিচের স্তরে তাকে দেখানো হবে। অনন্তর তাকে বলা হবে, যাও, ওখানে নেমে ওটা তুলে আনো। অতঃপর সে নেমে গিয়ে সেটি কাঁধে বয়ে নিয়ে আসবে। তার কাছে জিনিসটির ওজন পৃথিবীর সব পাহাড়ের চেয়ে বেশি মনে হবে। তার ধারণা হবে, তুলে আনলেই সে দোজখের আগুন থেকে নাজাত পাবে। কিন্তু সে যখন জাহান্নামের শেষ প্রান্তে চলে আসবে, তখনই ওই জিনিসটি নিয়ে পুনরায় জাহান্নামের সবচেয়ে নিচের স্তরে পড়ে যাবে। এভাবে সে চিরকালই জাহান্নামে থাকবে।
রাষ্ট্রীয় দায়িত্ব এটাও একটি আমানত। এরও যথাযথ হেফাজত করতে হবে। মানুষের প্রাপ্য মানুষদের কাছে পৌঁছে দিতে হবে। এখানে খেয়ানত করলেও আল্লাহ তায়ালার কঠিন আজাবে পাকড়াও হতে হবে। হযরত আবু জর গিফারি (রা.) নবীজির কাছে রাষ্ট্রীয় দায়িত্ব কামনা করলে তিনি বললেন, আবু জর, তুমি তো দুর্বল প্রকৃতির লোক। আর এটা হচ্ছে একটি আমানত। কেয়ামতের দিন এটা লজ্জা ও অপমানের কারণ হবে। তবে যে ব্যক্তি এটাকে তার দায়িত্ব হিসেবে গ্রহণ করেছে এবং যথাযথভাবে সে দায়িত্ব পালন করেছে তার বিষয়টি ভিন্ন।
ইসলামের দ্বিতীয় খলিফা হযরত ওমর (রা.) ঘোষণা করেছিলেন, আমার রাষ্ট্রের একটি কুকুরও যদি না খেয়ে মারা যায় এর জন্য আমিই দায়ী হব। তিনি রাতের আঁধারে ঘুরে ঘুরে প্রজাদের খোঁজখবর রাখতেন। কেউ অভুক্ত থাকলে নিজের কাঁধে খাবারের বস্তা বহন করে তার বাড়িতে দিয়ে আসতেন। ইসলামের চতুর্থ খলিফা হজরত আলীর (রা.) খেলাফতের দায়িত্ব গ্রহণের পরে এক রাতে তিনি বাতির আলোতে রাষ্ট্রীয় কাজ করছিলেন। এমন সময় এক ব্যক্তি বিশেষ প্রয়োজনে তার কাছে এল। আলী (রা.) সঙ্গে সঙ্গে বাতি নিভিয়ে দিলেন। তারপরে আগত ব্যক্তির সঙ্গে কথা বলা শুরু করলেন। আগন্তুক কৌতূহলি হয়ে তার কাছে এর কারণ জানতে চাইলে তিনি জবাব দিলেন, এতক্ষণ আমি সরকারি কাজ করছিলাম। তাই সরকারি তেল ব্যবহার করেছি।এখন তো ব্যক্তিগত কাজ করছি। সরকারি বাতি ব্যবহার করলে এটা আমানতের খেয়ানত হবে। সাহাবায়ে কেরাম আমাদের আদর্শ। সত্যের মাপকাঠি। আমাদের উচিত, তাদের আদর্শে আদর্শবান হওয়া। জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রে তাদের অনুসরন এবং অনুকরণ করা। তাহলেই সুন্দর, শৃঙ্খল ও শান্তির একটি সমাজ বিনির্মাণ সম্ভব।
PUBLISHED FROM
2152-B WESTCHESTER AVE BRONX
NEW YORK 10462 USA
Email : voiceofkulaura2@gmail.com
Chief Editor : Shafiq Chowdhury
Editor : Abdul Quayyum Mintu
Managing Editor : Nurul Islam Emon
Design and developed by positiveit.us