আজ বিদ্রোহী কবি কাজী নজরুল ইসলামের প্রয়াণ দিবস।

প্রকাশিত: ৭:১৭ পূর্বাহ্ণ, আগস্ট ২৭, ২০২৩

আজ বিদ্রোহী কবি কাজী নজরুল ইসলামের প্রয়াণ দিবস।
booked.net

Manual8 Ad Code

অনলাইন ডেস্কঃ- বিদ্রোহী কবি কাজী নজরুল ইসলাম ছিলেন বাংলা সাহিত্যের অনন্য রূপকার। তিনি এসেছিলেন জ্যৈষ্ঠে, বিদায় নিয়েছেন ভাদ্রে। যেন ধ্রবতারার মতোই ছিল তার আবির্ভাব। চোখ মেলেই তিনি যে সমাজ আর রাষ্ট্র দেখলেন, তা ছিল শ্বাপদসংকুল। স্বভাবতই তাকে বিদ্রোহের পথে যেতে হয়েছে। শোষিত-নিপীড়িত মানুষের বঞ্চনার ক্ষোভ দীপ্ত শিখার মতো জ্বলে উঠেছিল তার কণ্ঠে। তার সেই যুদ্ধটা ছিল দূর্গম ও দীর্ঘ। সাম্প্রদায়িকতার বিষকে দূর করে অন্ধকারে ছড়িয়েছিলেন ধর্মনিরপেক্ষতা আর মানবতার আলো। এতে তিনি রক্তাক্ত হয়েছেন। তবে স্থির প্রত্যয়ী উচ্চারণে দ্বিধা করেননি এতটুকু। আবার তিনিই কোমল সুকুমার হৃদয়ানুভবে আবেগে থরথর।

Manual1 Ad Code

মাত্র ২২ বছর শিল্প সৃষ্টিতে সক্রিয় থাকতে পেরেছিলেন। এই স্বল্প সময়ে পৌনঃপুনিকভাবে তিনি মানুষের মুক্তির কথাই বলেছেন। তাই এক হাতে বাঁশের বাশরি, আর হাতে রণ-তুর্য- এই যুগলবন্ধী যেন অবধারিত ছিল। দ্রোহ আর প্রেম সত্তার নিবিড় যোগ নজরুল কাব্যে স্বতন্ত্র মাত্রা যোগ করেছে। মানবতা, প্রেম, দ্রোহ, চেতনার কবি তিনি। নিজের ক্ষুরধার লেখনীর আঁচড়ে স্থান করে নিয়েছেন বিশ্বসাহিত্যে। গদ্য, পদ্য, উপন্যাস, সঙ্গীত- সব শাখায় তার আগমন ছিল ধূমকেতুর মতো। বাংলা সাহিত্যে তার আগমন প্রসঙ্গে বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর নিজের এক গ্রন্থের উৎসর্গপত্রে লিখেছিলেন ‘আয় চলে আয়রে ধূমকেতু/আঁধারে বাঁধ অগ্নিসেতু, দুর্দিনের এই দুর্গশিরে উড়িয়ে দে তোর বিজয় কেতন।’

আজ ১২ ভাদ্র। জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলামের ৪৭তম প্রয়াণ দিবস। ৪৭ বছর আগে এই দিনে ঢাকার তৎকালীন পিজি হাসপাতালে (বর্তমানে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় হাসপাতাল) ৭৭ বছর বয়সে এই মহৎপ্রাণ কবির জীবনাবসান ঘটে। বাংলা সাহিত্যে তার অবদান অসামান্য। অসাম্প্রদায়িক মানবতাবাদী ও সাম্যের এই কবি আছেন কোটি কোটি বাঙালির হৃদয়ে। জীবদ্দশায় তিনি সর্বদা হিন্দু-মুসলমান মিলনের গান গেয়েছেন। তার ইসলামী সঙ্গীত ও গজল আজও হৃদয় কাঁড়ে। পাশাপাশি তিনি সিদ্ধহস্ত ছিলেন শ্যামাসঙ্গীত রচনার ক্ষেত্রেও। বিদ্রোহী কবির মর্যাদা পেলেও তিনি ছিলেন মূলত প্রেমের কবি। কাজী নজরুল ইসলামই এ দেশের সমাজচেতনা ও রাজনৈতিক জগতের সর্বোত্তম কবি, যিনি গণমানুষের সঙ্গে সাহিত্যের যোগসূত্র।

Manual7 Ad Code

প্রাথমিক শিক্ষা ছিল ধর্মীয়। তার বিচিত্র জীবনে স্থানীয় এক মসজিদে মুয়াজ্জিন হিসেবেও ছিলেন তিনি। রুটির দোকানেও কাজ করেন তিনি। অসংখ্য কবিতা ও গান রচনা করেন। ১৮ বছর বয়সে ব্রিটিশ সেনাবাহিনীতে যোগ দেন। ভারতীয় সেনাবাহিনীতে কিছুদিন কাজ করার পর সাংবাদিকতাকে পেশা হিসেবে বেছে নেন। এক সময় তিনি ব্রিটিশ রাজের বিরুদ্ধে প্রত্যক্ষ সংগ্রামে অবতীর্ণ হন। এ সময় তিনি রচনা করেন ‘বিদ্রোহী’ ও ‘ভাঙার গান’ কবিতা। রচনা করেন সাময়িকী ধূমকেতু। এক সময় তিনি জেলবন্দি হন। কারাবন্দি অবস্থাতেই তিনি লেখেন ‘রাজবন্দীর জবানবন্দি’।

তার লেখনি জাতীয় জীবনে অসাম্প্রদায়িক চেতনা বিকাশে ব্যাপক ভূমিকা পালন করে আসছে। তার কবিতা ও গান মানুষকে যুগে যুগে শোষণ ও বঞ্চনা থেকে মুক্তির পথ দেখিয়ে চলছে। বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধে তার গান ও কবিতা ছিল প্রেরণার উৎস।

কাজী নজরুল ইসলাম নিজ গ্রামে মসজিদ ও স্কুলে অধ্যয়ন করেন। ছোটবেলা থেকেই তিনি কবিতা ও গান লেখা শুরু করেন। নিজে বিভিন্ন আসরে গান পরিবেশন করেন। তার কবিতা ক্রমে ব্রিটিশদের শোষণের বিরুদ্ধে তীব্র প্রতিবাদী ও শক্তিশালী হয়ে ওঠে। তার বিদ্রোহী কবিতায় সরাসরি ব্রিটিশ রাজকে সমালোচনা করা হয়।

দারিদ্র্যের কশাঘাতে জর্জরিত হয়েও কবি কখনো আপস করেননি। মাথানত করেননি লোভ-লালসা, খ্যাতি, অর্থ, বিত্তবৈভবের কাছে। আজীবন সংগ্রাম করে গেছেন শোষিত-বঞ্চিত মানুষের মুক্তির জন্য। মানবতার মুক্তির পাশাপাশি সা¤প্রদায়িকতা, ধর্মান্ধতা, কুসংস্কার, কূপমণ্ডূকতার বিরুদ্ধেও ছিলেন সোচ্চার। মুক্তবুদ্ধি ও চিন্তার পক্ষে কলম ধরেছেন নির্ভীক চিত্তে। তার রচিত ‘চল্ চল্ চল্’ গানটি আমাদের রণসংগীত।

ছোটগল্প, উপন্যাস, গান, নাটক লিখলেও মূলত কবি হিসেবেই তিনি বেশি পরিচিত। আজীবন বিদ্রোহী দৃষ্টিভঙ্গি আর অন্যায়ের বিরুদ্ধে সোচ্চার উচ্চকণ্ঠের কারণে তিনি ভূষিত হন ‘বিদ্রোহী কবি’ হিসেবে। তার উল্লেখযোগ্য গ্রন্থের মধ্যে রয়েছে অগ্নিবীণা, সঞ্চিতা, চক্রবাক, প্রলয় শিখা, মরু ভাস্কর, দোলনচাঁপা, বিষের বাঁশি, ভাঙ্গার গান, সাম্যবাদী, পুবের হাওয়া, ব্যথার দান, রিক্তের বেদন, বাঁধনহারা, মৃত্যুক্ষুধা, কুহেলিকা ইত্যাদি। এছাড়া প্রায় ৩ হাজার গান রচনা করেন কাজী নজরুল। তার গানের বাণী হয়ে ওঠে মানবতাবাদ ও সাম্যবাদের পক্ষে শক্তিশালী হাতিয়ার।

Manual7 Ad Code

কবির মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে রাজধানী ঢাকা, কবির স্মৃতিধন্য ময়মনসিংহের ত্রিশাল সহ দেশের বিভিন্ন স্থানে পালিত হচ্ছে নানা কর্মসূচি। আজ রবিবার ভোরে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় জামে মসজিদের পাশে কবির সমাধিতে ফুলেল শ্রদ্ধা জানিয়েছেন কবির ভক্ত ও অনুরাগীরা। বিভিন্ন সামাজিক-সাংস্কৃতিক সংগঠন ও রাজনৈতিক দল নানা কর্মসূচি পালন করছে। তাছাড়া বাংলাদেশ বেতার, টেলিভিশন ও বিভিন্ন বেসরকারি টেলিভিশন চ্যানেলে কবির মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে বিশেষ অনুষ্ঠানমালা প্রচার হচ্ছে।

Manual2 Ad Code

Ad

Follow for More!