প্রকাশিত: ৬:৪৫ অপরাহ্ণ, ডিসেম্বর ১১, ২০২৩
অনলাইন ডেস্কঃ- এক হার না মানা গল্পের নায়ক অমিত চৌধুরী। মাত্র ১৮ বছর বয়সে দুই কনস্টেবলকে হত্যা ও রাইফেল লুটের অভিযোগ জেলে যেতে হয়েছিল তাঁকে। ঘটনায় সংশ্লিষ্ট না থাকার প্রমাণ ছিল অকাট্য। তবু তাতে কান দেয়নি পুলিশ, প্রমাণ হয়নি আদালতেও। কিন্তু যে অপরাধ তিনি করেননি, তার দায়ে জেলে দুই বছর কাটানোকে মেনে নিতে পারেননি অমিত।
তিনি বুঝতে পেরেছিলেন, এই কলঙ্কের জীবন থেকে মুক্তির একমাত্র উপায় ‘জ্ঞানের আলো’। আর সেই জ্ঞান হতে হবে আইনের। ফলে জেল প্রকোষ্ঠেই শুরু হলো সাধনা। অবশেষে ১২ বছর আগের মামলা আবারও সচল করে নিজেকে নির্দোষ প্রমাণ করেছেন।
সম্প্রতি এই নাটকীয় ঘটনাটি ঘটেছে ভারতের উত্তর প্রদেশে। জানা যায়, রাজ্যের মিরাটের বাসিন্দা অমিত। ২০১১ সালে দুই কনস্টেবল কৃষ্ণপাল ও অমিত কুমার খুন হন। লুট হয় তাঁদের রাইফেল। অভিযোগের আঙুল ওঠে কুখ্যাত কাইল গ্যাংয়ের দিকে। আর মন্দ কপাল, অমিত চৌধুরীকেও সেই গ্যাংয়ের সদস্য হিসেবে দাগিয়ে দেওয়া হয়। কারণ, তৎকালীন মুখ্যমন্ত্রী মায়াবতী অপরাধীদের দ্রুত গ্রেপ্তারের নির্দেশ দিয়েছিলেন।
অমিত ঘটনাস্থলের ধারেকাছেও ছিলেন না। বোনের সঙ্গে তিনি ছিলেন শামলি জেলায়। কিন্তু পুলিশ কোনো কথা কানে নেয়নি। আরও ১৬ জনের সঙ্গে তাঁকেও অপরাধী বলে চিহ্নিত করা হয়। ভারতীয় দণ্ডবিধি ও জাতীয় নিরাপত্তা আইনের মতো কঠোর ধারা দেওয়া হয় তাঁদের বিরুদ্ধে।
তার পরের দুই বছর কাটে দুঃস্বপ্নের মতো। মুজাফফরনগর জেলের চার দেয়ালের মধ্যে অন্ধকারে ডুবে যেতে বসেছিল চাষির ছেলে অমিতের ভবিষ্যৎ। কারণ, সেখানে অনিল দুজানা ও ভিকি ত্যাগীর মতো বাঘা গ্যাংস্টাররা ছিলেন। তাঁরা অমিতকে নিজেদের গ্যাংয়ে জড়ানোর চেষ্টাও করেছিলেন। কিন্তু কারারক্ষী অমিতকে অন্য ব্যারাকে সরিয়ে নেন।
২০১৩ সালে জেল থেকে জামিনে ছাড়া পেলেও মাথায় অপরাধের কলঙ্ক লেগেই ছিল। অমিতের স্বপ্ন ছিল সেনাবাহিনীতে যোগ দেবেন। কিন্তু এই খুনের মতো অপরাধের অভিযোগ মাথায় নিয়ে তা সম্ভব নয় বুঝতে পেরেছিলেন অমিত। তবে সারা জীবন যেন এই কলঙ্ক নিজেকে বইতে না হয়, পরিবার যেন মাথা উঁচু করে সমাজে চলতে পারে, সে জন্য সিদ্ধান্ত নেন আইনে পড়াশোনা ও নিজেকে নির্দোষ প্রমাণ করার। একে একে পাস করেন বিএ, এলএলবি ও এলএলএম। উত্তীর্ণ হন বার কাউন্সিলের পরীক্ষাতেও।
এরপর শুরু হয় নিজেকে কলঙ্কমুক্ত করার লড়াই। ১২ বছর আগের মামলা পুনরায় আদালতে তোলেন অমিত। আদালতে সাক্ষী পুলিশ কর্মকর্তা তাঁকে চিনতেই পারেননি। হাজির করা হয় আরও সাক্ষ্যপ্রমাণ। অতঃপর বিচারক অমিতসহ ১২ জনকে নির্দোষ বলে রায় দেন।
কিন্তু তত দিনে আসল অপরাধীদের ভাগ্য আগেই নির্ধারিত হয়ে গেছে। মূল অপরাধী সুমিত কাইল ২০১৩ সালে বন্দুকযুদ্ধে নিহত হন। আর অপর আসামি নীতুর যাবজ্জীবন কারাদণ্ড ও ২০ হাজার রুপি জরিমানা করা হয়। অন্যদিকে রায় ঘোষণার আগেই ক্যানসারে মারা গেছেন ধর্মেন্দ্র।
মিথ্যা অভিযোগে অমিতের সৈনিক হওয়ার স্বপ্ন ভেঙেছে ঠিকই, কিন্তু হাল ছাড়েননি তিনি। এই যুবকের ভাষ্য, ‘আমি ফৌজদারি আইনে পিএইচডি করতে চাই। আমি মনে করি, ঈশ্বর আমাকে অন্য হতভাগ্যদের জন্য লড়াই করার জন্য বেছে নিয়েছেন।’
Published From
Positive International Inc,
73-16, Roosevelt Ave Floor 2, Jackson Heights, New York 11372.
Email : voiceofkulaura2@gmail.com
Chief Editor : Shafiq Chowdhury
Editor : Abdul Quayyum
Managing Editor : Nurul Islam Emon
Design and developed by positiveit.us